স্টাফ রিপোর্টার : স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেছেন, চিকিৎসা সেবা নিয়ে চিকিৎসক এবং রোগীদের মধ্যে যাতে কখনোই কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেজন্য সরকার রোগী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। খুব শিগগিরই এটি সংসদে উত্থাপন করা হবে। আইনটি প্রণীত হলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
আজ রোববার (৭ এপ্রিল) বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক এবং নার্সসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ডাঃ সামিয়া ইসলাম গ্যালারীতে বিকেলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ঐ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল।
ডা. রেবেকা সুলতানা দক্ষতা বৃদ্ধিতে চিকিৎসকদের আরও মনোযোগী হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরীগুলোতে কেস হিস্ট্রির যেসব বই রয়েছে সেগুলো চিকিৎসকদের প্রতিনিয়ত পড়া উচিত। এর পাশাপাশি নারী চিকিৎসকদের আরও বেশি করে সার্জারি এবং কার্ডিওলজিসহ অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাসপাতালে নিয়োজিত ওয়ার্ড বয়, নার্স এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ভুল চিকিৎসার অভিযোগে কোন তদন্ত ছাড়াই চিকিৎসকদের গ্রেফতারের বিরোধিতা করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, কোন তদন্ত ছাড়াই একজন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা উচিত নয়। এ বিষয়ে সরকার সজাগ রয়েছেন জানিয়ে ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, তবে কোন কোন চিকিৎসক রাউন্ড দিয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নার্সদের মধ্যেও কেউ কেউ রোগীকে ওষুধ না খাইয়ে বরং তার বালিশের কাছে রেখে আসেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এগুলোও ঠিক নয়। রোগীদের সেবায় চিকিৎসক এবং নার্সদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে শঙ্কাহীন, বাধাহীন এবং ব্যধিহীন দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। অনুষ্ঠানে বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান জেলা এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মোস্তফা আলম নাননু চিকিৎসকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ রয়েছে। সেটা থেকে বিচ্যুত হবার কোন সুযোগ নেই।
মত-বিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মোঃ জুলফিককার আলম, শজিমেকের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ সুশান্ত কুমার সরকার, শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ, টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক ডঃ হোসনে আরা বেগম, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সদস্য ডাঃ ভূবন মোহন দেবনাথ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সামির হোসেন মিশু, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শফিউল আজম, বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান, শজিমেক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ডাঃ নিতাই চন্দ্র সরকার, হেমটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ সুরজিৎ সরকার তিতাস, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ আশরাফ হোসেন তাজিন, ছাত্রলীগ শজিমেক শাখার সভাপতি শৈশব রায়।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন টিএমএসএস’র স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ মতিয়ার রহমান, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ জাকির হোসেন, আইএসটি বগুড়ার অধ্যক্ষ ডাঃ ওমর ফারুক মীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আরশাদ সাইয়িদ প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শজিমেক শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মনিরুজ্জামান আশরাফ। এর আগে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা শজিমেক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন এবং হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে জয়পুরহাট জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি জানান, গতকাল শনিবার বিকালে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ রোকেয়া সুলতানা এমপি জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চত্বরে হাসপাতাল ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) জয়পুরহাট জেলা শাখা আয়োজিত মত বিনিময় সভার বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনে বলেন, আমি ও আমার মন্ত্রী ঈদের পরে ঝটিকা অভিযানে নামবো, যেখানে ত্রুটি পাওয়া যাবে তাদের শাস্তির আওতায় নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যারা অবসরে গেছেন তাদের কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে আগামী সংসদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন উপস্থাপন করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ সরদার রাশেদ মোবারক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। ডাঃ মোঃ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ তুলশী চন্দ্র রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আনোয়ার হোসেন। স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত করার লক্ষ্যে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের লোকবল সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএমএ'র সভাপতি ডাঃ মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
মতবিনিময় শেষে হাসপাতাল তত্বাবধায়কের হাতে একটি ফটো থেরাপি মেশিন হস্তান্তর করেন প্রতিমন্ত্রী। এর আগে প্রতিমন্ত্রী ডাঃ রোকেয়া সুলতানা শহীদ ডাঃ আবুল কাশেম ময়দানে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানসহ নানা কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।