দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি : দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের কোল ঘেঁষে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া এক কালের খরস্রোতা নাগর নদ এখন প্রায় মৃত। বগুড়া উপজেলাগুলোর মধ্যে দুপচাঁচিয়া একটি উল্লেখযোগ্য। ব্যবসা-বাণিজ্য, মিল, কল-কারখানায় সুপ্রতিষ্ঠিত এই উপজেলায় একসময় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল নাগর নদ।
সেই সময়ে সড়ক পথ ছিল খুবই সংকীর্ণ ও সরু। ঘোড়া ও গরু মহিষের গাড়ি ছিল তৎকালীন সময়ের স্থল পথের একমাত্র বাহন। যোগাযোগের সহজলভ্যতার কারণে নাগর নদের আর্শীবাদেই নদী কেন্দ্রিক দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরসহ ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে তালোড়ায় পৃথক দুটি বন্দর গড়ে উঠে। সেই হিসাবে বন্দর নগর দুপচাঁচিয়া ও তালোড়ার পরিচয় ছিল সর্বত্র।
স্বাধীনতার আগে থেকে আশির দশক পর্যন্ত এই নদী পথে বড় বড় পালতোলা নৌকা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ধরনের মালামাল নিয়ে দুপচাঁচিয়া সদর ও তালোড়া বন্দরে আসত। আবার তা তালোড়া রেল পথ দিয়ে দেশের অন্যত্র চলে যেত। দুপচাঁচিয়া বন্দরে সেই সময় গড়ে ওঠা জুট মিলে এলাকায় বড় বড় পালতোলা নৌকায় পাট নিয়ে ভিড় করত।
আবার মিলের তৈরি চট নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যেত। কিন্তু কালের গর্ভে আজ তা সবই বিলীন। নাব্যতাহীনতার জন্য নাগর নদ শুধু বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য সময় পানি শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে নদীর দু’পাশ দিয়ে জমিগুলোতে যে শস্যগুলো নদের পানি নিয়ে চাষাবাদ করা হত, পানি না থাকায় তা আজ সম্ভব হচ্ছে না। জৌলুসপূর্ণ নাগর নদ আজ মরা নদে পরিণত হয়েছে।
ভারতে অভিশাপ ও স্থানীয় ভূমি দস্যুদের দখল বাজির কারণে দিনে দিনে সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণ হয়ে এ নদ এখন এককালের মরা নদ বদনাম ঘুচিয়ে লালায় পরিণত হয়েছে।
নদীর সর্বত্র একই অবস্থা এখন দেখে বুঝার উপায় নেই, এটাই ছিল সেই খরস্রোত দুপচাঁচিয়া বন্দরের প্রবীণ পাট ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক সরদার, আতাউর রহমান বাবলা, প্রাণতোষ বসাক, আনোয়ারুল হক তালুকদার, এমদাদুল হক তালুকদার, সুভাষ প্রসাদ কানু সহ অনেকেই জানান, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে আশির দশক পর্যন্ত দুপচাঁচিয়া সদরের বন্দর ঘাট ও বন্দর নগর তালোড়ার গোডাউন ঘাটে নাগর নদের শীতার ঘাটে বড় বড় পালতোলা নৌকা সব সময় বিভিন্ন মালামাল লোড আনলোড করতে দেখা যেত।
যা নদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে আকৃষ্ট করত। কিন্তু বর্তমানে নাগর নদের পানি শূন্যতার দরুন এই সুখ্যাতি আর নাই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।