টাঙ্গন নদীতে রাবার ড্যাম : ফিরে পেয়েছে ভরা যৌবন
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : তীব্র দাবদাহ চলছে। বৃষ্টির দেখা নেই। প্রখর রোদ্রের তাপে শুকিয়ে গেছে দিঘি-পুকুর, খাল, বিল, নদী-নালা। বড় নদীগুলোও বইছে ক্ষীণ ধারায়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। অনেক টিউবওয়েল ও নলকূপে পানি উঠছে না।
বোরো আবাদের সেচ নিয়ে চরম বিপদে আছেন কৃষকরা। চারিদিকে জীবনযাত্রায় যখন হাঁসফাঁস অবস্থা ঠিক সেই সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে টাঙ্গন নদীর সাগুনী এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের উজানে নদী এখন পানিতে ভরপুর। নদীর এ অংশে লো-লিফট পাম্প এবং শ্যালো মেশিন বসিয়ে সেই পানি দিয়েই চলছে সেচ কার্যক্রম।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও জেলার বড় নদী টাঙ্গন। টাঙ্গন নদী ক্রমেই ভরাট হওয়ার কারণে পৌষ-মাঘ মাসেই নদীর পানি শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হতো। ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত নদীর পানি গড়িয়ে চলে যেত ভারতে। নদীর পানি কিভাবে কাজ লাগানো যায় সেই ভাবনা থেকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ২০১৫ টাঙ্গন নদীতে পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনি এবং রানীরঘাট এলাকায় দু’টি রাবাম ড্যাম নির্মাণ করা হয়।
প্রথম দিকে রাবার ড্যাম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলেও কয়েকবছর ধরে পুরোদমে চালু হয়েছে। আগে এসময় নদীটি শুকিয়ে গেলেও বর্তমানে রাবার ড্যামের রাবার ফুলিয়ে পানি আটক রাখার ফলে ড্যামের উজানে নদী ফিরে পেয়েছে ভরা যৌবন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পীরগঞ্জ ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর মোহাম্মদ রুহুল ইসলাম জানান, ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ টাঙ্গন নদীর সাগুনী রাবার ড্যাম উজানে পর্যায়ক্রমে ২০টি এবং রানীরঘাট রাবার ড্যাম এলাকায় ৩৩টি লো লিফ্ট পাম্প চালু করেছে।
নদীতে মজুদ করা পানি দিয়েই নদীর দুই ধারে সাগুনী রাবার ড্যামের আওতায় সাগুনি, বাঁশগাড়া, চাপোড়, মছলন্দপুর, মশালডাঙ্গী, মালঞ্চা, নাকাটি, ফুটকিবাড়ী, ভামদা, সুলতানপুর, সেনিহারি এবং রানীরঘাট রাবার ড্যামের আওতায় বৈরচুনা, আজলাবাদ, শিরাইল, চান্দোহর, জগন্নাথপুর, কাটাবাড়িসহ ১০/১২টি গ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে জমিতে চলছে চাষাবাদ।
যা আগে পড়ে থাকত অনাবাদি হিসেবে। পাম্পগুলো দিয়েও প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। অন্যান্য সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে আরও প্রায় পাঁচশ’ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। প্রায় ৩০ হাজার কৃষক তাদের জমিতে সেচ দিতে পারছে। এদিকে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি মাছও। ওইসব গ্রামে ভূ-গর্ভস্থ পানির লেয়ার ওপরে উঠে এসেছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লায়লা আরজুমান আরা জানান, রাবার ড্যাম স্থাপনে সুফল পাচ্ছে হাজারও কৃষক। সাগুনী রাবার ড্যামের উজানে প্রায় ৪ কি. মি. এবং রাণীরঘাট রাবার ড্যামের উজানে প্রায় ৫ কি. মি. এলাকায় নদীর দু’পাশের বিশাল পতিত জমি সেচের আওতায় এসেছে।
এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানিতে আয়রণ থাকার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নদীর পানিতে কোনো আয়রণ থাকে না এতে ফলন বাড়বে। সেচের খরচও কম হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।