কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : কুড়িগ্রাম জেলা শহরের কৃষ্ণপুর পাইকপাড়া গ্রামের যুবক মোশাররফ হোসেন ফারুক। শহরের এমএ ছাত্তার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। নিজে একজন উচ্চ প্রেসারের রোগী, স্ত্রীও ডায়েবেটিকসে আক্রান্ত। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢেঁকিছাঁটা লালচাল কিনে খেতে হতো তাদেরকে।
একসময় মনে হলো নিজেই এই চাল তৈরি করবেন। সেই মানুষে প্রথমে ইউটিউব দেখে দুটি ঢেঁকি স্থাপন করেন কিন্তু তাতে বিফল হন তিনি। এরপর ঠাকুরগাঁও জেলায় গিয়ে এরকম পদ্ধতি অনুসরণ করে এখন নিজেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢেঁকিছাঁটা চাল উৎপাদন করছেন। সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে রংপুর, বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এস.এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢেঁকিছাঁটা লালচাল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উপকারি খাদ্য। স্বল্প পরিসরে দেশীয় প্রযুক্তিতে এটি উৎপাদিত হচ্ছে। আরও মানুষ উৎসাহিত হয়ে এটি উৎপাদন করলে রোগব্যাধী প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এক সময় উড়ুন-গাইন আর ঢেঁকির শব্দে মুখরিত ছিল গ্রামগঞ্জ। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শোনা যেতো এই ছন্দময় শব্দ। যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে এসব হস্ত ও পা চালিতযন্ত্র। আধুনিকতা যেমন মানুষকে সবকিছু হাতের কাছে সহজলভ্য করে দিয়েছে। তেমনি বিশুদ্ধতার জায়গা দখল করে নিয়েছে অস্বাস্থ্যকর পণ্য ও খাবার। চিকন চালের নামে যখন ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে। তখন এই ঢেঁকিছাঁটা লালচাল মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
কুড়িগ্রাম গড়েরপাড় লেদ মেকানিকস সফিকুল ইসলাম সফি জানান, ঠাকুরগাঁয়ের রানীশংকল গ্রামের জনৈক রশিদ হাত-পা ছাড়াই মেশিনে ঢেঁকি চালিয়ে লালচাল উৎপাদন করছিলেন। তার কাছ থেকে আইডিয়া নিয়ে মেশিন তৈরি করা হয়েছে।
উদ্যোক্তা মোশাররফ হোসেন ফারুকের স্ত্রী জেসমিন নাহার বেলি জানান, প্রথমে মনে হয়েছে পাগলামি করছে। পরে যখন লালচাল উৎপাদন শুরু হলো, আমরা খেতে লাগলাম। তখন মনে হচ্ছে একটি ভালো কাজ করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তা মোশাররফ হোসেন ফারুক বলেন, চিকিৎকদের পরামর্শে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢেঁকিছাঁটা লালচাল সংগ্রহ করতে হতো। পরে ইউটিউব দেখে নিজেই আগ্রহী হয়ে উঠি। এতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমি নিজে খেতে পারছি, উচ্চবিত্তদের মাঝে বিক্রিও করছি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।