ভিডিও

পাবনার ফরিদপুরে নকল দুধের রমরমা ব্যবসা

সরবরাহ হচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়

প্রকাশিত: মে ০৬, ২০২৪, ০৫:৩৭ বিকাল
আপডেট: মে ০৬, ২০২৪, ০৫:৩৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

ফরিদপুর (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় নকল দুধের রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা ও নকল দুধ তৈরির সামগ্রী জব্দ করেও নকল দুধ তৈরি ঠেকানো যাচ্ছে না।

আসল দুধের সাথে এসব নকল দুধ মিশিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ নকল দুধ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। নকল দুধ সরবরাহের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় নকল দুধ তৈরিকারকদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

উপজেলার পাশেই বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা কারখানা থাকায় পাবনা জেলার সবচেয়ে বেশি দুগ্ধ খামারি রয়েছে ফরিদপুর উপজেলায়। উপজেলা সমবায় অফিসার কায়সার মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, ফরিদপুর উপজেলায় ১২৭টি নিবন্ধিত দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির বেশির ভাগ বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় দুধ সরবরাহ করে।

এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরো ব্যক্তিগত দুই সহস্রাধিক দুগ্ধ উৎপাদনের খামার রয়েছে। উপজেলায় প্রাণ,  আকিজ, ব্র্যাক, ইবলু, আড়ং ও মিল্কভিটার প্রায় ৫৪টি দুধ কালেকশন পয়েন্ট রয়েছে। উৎপাদিত দুধের প্রায় ৭০ শতাংশ এসব প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করে থাকে।

অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের বেশির দুধ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শীতলীকরণ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। এসব স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ সয়াবিন তেলের সাথে কস্টিক সোডা, চিনি, লবণ এবং আরো কিছু কেমিক্যাল ও পানি মিশিয়ে নকল দুধ তৈরি করে। এসব নকল দুধ অল্প কিছু আসল দুধের সাথে মিশিয়ে বাজারজাত করে থাকে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

গত ৭ জানুয়ারী  নির্বাহী মাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোছাঃ মুর্শিদা খাতুন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলার পার ফরিদপুর গ্রামের শফি প্রামাণিককে নকল দুধ তৈরির অপরাধে ৫০ হাজার টাকা এবং ২ এপ্রিল গোপালনগর গ্রামের বাঁধের কারখানা থেকে নকল দুধ তৈরির অপরাধে একই ব্যক্তি শফি প্রামাণিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে দুধ তৈরির মেশিনসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করেন।

এছাড়া প্রায় ৬ মাস আগে নকল দুধ তৈরির অপরাধে উপজেলার ডেমড়া বাজারের আব্দুল আলীমকে দেড়লাখ টাকা এবং আরকান্দি বাজারের সাইদুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হয়। ৩ মে মৃধাপাড়া গ্রামের সরোয়ারকেও নকল দুধ তৈরির অপরাধে ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ মেশিন জব্দ করা হয়।

এসব করেও নকল দুধ তৈরি ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোপেশ চন্দ্র সরকার স্বাগত বক্তব্যে বলেন,ফরিদপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশি এবং ভাল দুধ উৎপাদন হলেও ডেমড়া, আরকান্দি, পারফরিদপুর ও গোপালনগরের একটি দুষ্টচক্রের নকল দুধ তৈরির কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদপুর প্রেস ক্লাব থেকে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ডেমড়া বাজারে ২৫ থেকে ৩০ জন,অওারকান্দি বাজারে ১৩ জন, পারফরিদপুর এবং গোপালনগর উপজেলায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ নকল দুধ তৈরি হচ্ছে। এ সব নকল দুধ তৈরিকারকরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এজেন্টদের মাধ্যমে সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে।

পাবনা জেলা দুগ্ধ খামারী এসোসিয়েশনের সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র এবং জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারী সাইফুল ইসলাম বলেন,ফরিদপুরে উদ্বেকজনক হারে নকল দুধ তৈরির সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি নকল দুধ মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে এবং ক্যান্সার,কিডনি ড্যামেজ, লিভার সিরোসিসসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধি হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শিরিন সুলতানা বলেন, দুধসহ খাদ্যে ভেজাল মেশানো দন্ডনীয় অপরাধ। এসব ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS