রাজশাহী প্রতিনিধি : গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে রাত ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষ কাঁচের বোতল ও ৭টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে এসে রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের তিন কর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া রোববার ভোরে তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে মনিরুল ইসলাম নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছাত্র আবাসিক হলের এক নিরাপত্তা প্রহরীকে মারধর করে ছাত্রলীগ। পরে ওই নিরাপত্তা প্রহরীকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
এর আগে শনিবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিবের অনুসারীদের সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১১ টায় রাবির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে রাজনৈতিক আলোচনা করার জন্য আসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ সেখানে যান। এমন পরিস্থিতিতে আতিক নিয়াজকে গেস্ট রুম থেকে কয়েক মিনিটের জন্য বাইরে যেতে বলেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে আতিক ও নিয়াজের মাঝে বাগবিতন্ডা ও কথা কাটাকাটি হয়। এতে উত্তেজনা প্রথমে হলে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর নিয়াজ মোর্শেদ তার নেতাকর্মীদের নিয়ে হলের ভিতরে এবং আতিক তার নেতাকর্মী নিয়ে হল গেটে অবস্থান নেন।
রাত পৌনে ১২ টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার অনুসারীরা হল গেটে অবস্থান নিয়ে ‘বাবু-গালিব পরিষদ, সবার সেরা পরিষদ,‘এ্যাকশন এ্যাকশন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট এ্যাকশন’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।
মিছিল চলাকালীন নিয়াজ মোর্শেদের নেতাকর্মীরা প্রথমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের ধাওয়া করেন এবং হলের দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলার ছাদে অবস্থান নেন। এসময় তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এর কিছুক্ষণ পর তারা হল থেকে বের হয়ে হলের প্রধান ফটকের সামনে বিপক্ষ গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে এবং প্রধান ফটকের সামনে থাকা তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।
পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগ শীর্ষ দুই নেতার অনুসারীরা পাল্টা ধাওয়া করেন এবং ইট-পাটকেল, কাঁচের বোতল ও ককটেল নিক্ষেপ করেন। এসময় মোট সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরপরে রাত সোয়া ১ টার দিকে ঘটনাস্থলে হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও পুলিশ আসে। প্রায় পৌনে ঘণ্টা চেষ্টা চালানোর পর রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে রোববার ভোর ৬টার দিকে ডেকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা হলের নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুলকে মারধর করে। এ ঘটনায় আহত নিরাপত্তাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আতিক কখন হলে আসে, কখন যায়, কখন কী করে এসব তথ্য আমি নিয়াজকে পাঠাই এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আতিকের নেতাকর্মীরা আমাকে মারধর করে। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়িতে অবস্থান করছি। আমি হল প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছি।’ তবে অভিযুক্ত আতিকসহ তার অনুসারীরা কর্মচারীকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, টিভির রুমে বসাকে কেন্দ্র করেই মূলত ঘটনার সূত্রপাত। পরে নিয়াজ ও তার সমর্থকরা বহিরাগত ও ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের ছাত্র আবাসিক হলে ঢুকিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে।
বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়, যাতে কোন প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে না পারে। নিয়াজ ও তার অনুসারীরাই ইটপাটকেল, বোতল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে দাবি ছাত্রলীগ সভাপতির।
সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে জানতে ছাত্রলীগ নেতা নিয়াজ মোর্শেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী হলে একদল ছাত্রের মধ্যে বিবাদ চলছে এমন খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। কেউ ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।