দৈনিক করতোয়াসহ সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশের পর
গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) : বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার উপজেলার নেপালি নাগরিক বীর-কা-বাহাদুর (৬৮) জীবন সায়ােহ্ন এসে বড় অসহায় হয়ে পড়ে নিজ দেশে ফিরতে চান। এ সংক্রান্তে ‘দৈনিক করতোয়া’সহ সোস্যাল মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে বাংলাদেশস্থ নেপালি দূতাবাসের সহযোগিতায় ৪০ বছর পর তিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করছেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা তিথি নেপালি দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত ললীতা সিনয়ালের কাছে তাকে হস্তান্তর করেছেন।
স্বাধীনতার পর মাত্র ১৫ বছর বয়সে পথ ভুলে নেপালি নাগরিক বীর-কা-বাহাদুর দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চলে আসেন। উপজেলা সদরের অলক ও বাবলুর যৌথ মালিকানাধীন চাতালে বীর-কা-বাহাদুর কাজ নেন। পরিশ্রমী ও বিশ্বাসী বীর-কা-বাহাদুর তার কাজের মাধ্যমে চাতাল মালিকের বিশ্বস্ততা অর্জনের পাশাপাশি মালিকের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। চাতাল ব্যবসা বন্ধ হলেও বীর-কা-বাহাদুর তার আশ্রয়দাতা অলকের চাতালের পাশে একটি ঘরে বসবাস করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। স্থানীয় মেহেদী হাসান নামের এক যুবক তার পাশে দাঁড়ায়। তার বিষয়ে ‘দৈনিক করতোয়া’ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সংবাদ প্রকাশ করেন। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর দুপচাঁচিয়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন জিহাদী তাকে অফিসে ডেকে নেন। তার কাছে বিস্তারিত শুনে তাকে দেশে ফিরে যেতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্নভাবে তৎপরতা শুরু করেন। এরই মাঝে সংবাদটি বাংলাদেশস্থ নেপালি দূতাবাসের নজরে আসে।
গতকাল বুধবার এ বিষয়ে নেপালী দূতাবাসের প্রেস সেক্রেটারি জানান, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় পথ ভুলে হয়ে আসা নেপালি নাগরিক বীর-কা-বাহাদুর দেশে ফিরতে চান। অর্থাভাবে দেশে ফিরতে পারছেন না। সংবাদটি তাদের দৃষ্টিতে আসলে তারা তার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার সুমন জিহাদীর মাধ্যমে নেপালি নাগরিক বীর-কা-বাহাদুরের সাথে ভিডিওকলে যোগাযোগ করেন। তার কথামতো নেপালে তার পরিবারের সন্ধান করতে থাকেন। এক পর্যায়ে নেপালে তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়। নেপালের ভিটাম জেলায় বাগিনা বাজার নামক এলাকায় তার বাড়ি। পরিবারের লোকজনের সন্ধান পাওয়া যায়। তারাও নেপালি নাগরিক বীর-কা-বাহাদুরকে দেশে নিয়ে যাওয়ার সম্মতি জানান। এরপর শুরু হয় অফিসিয়াল কাজকর্ম ও কাগজপত্র তৈরির কার্যক্রম। সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা তিথির সাথে যোগাযোগ করেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় নেপালি দূতাবাসের উপ-রাষ্ট্রদূত ললীতা সিনয়াল দুপচাঁচিয়া উপজেলায় আসেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নেপালি নাগরিক বীর-কা-বাহাদুরকে তাদের হাতে তুলে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা তিথি জানান, প্রায় ৪০ বছরযাবৎ নেপালি নাগরিক বীর-কা-বাহাদুর দুপচাঁচিয়া উপজেলায় বসবাস করে আসছেন। তিনি দেশে ফেরায় আগ্রহী হলে নেপালি দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।
উল্লেখ্য, এ সংক্রান্তে গত ২০ অক্টোবর ‘দৈনিক করতোয়ার’ ৬ষ্ঠ পাতায় ‘দুপচাঁচিয়ার নেপালি বীর-কা-বাহাদুর জীবন সায়ােহ্ন এসে দেশে ফিরতে চান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।