সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, রংপুর : বর্ষার আগেই তিস্তা নদীর ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। বছরের পর বছর তিস্তার ভাঙনে রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলার হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর ফসলি জমি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও মসজিদ তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
একরের পর একর আবাদি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন এখানকার মানুষ। ভাঙনের শিকার এসব পরিবারের অনেকেই পথের ফকির হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবেই দীর্ঘ হচ্ছে ক্ষতির পরিমাণ। নি:স্ব পরিবারগুলোর অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সামান্য বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) দিয়ে দায়সারা ভাবে ভাঙন রক্ষার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে আসছে প্রতিবছর।
তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিলেই রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা টেকসই পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণের নানান আশার বাণী শোনালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নদী অধিকার কর্মীদের অভিযোগ, সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে জোড়াতালি দিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
প্রকল্পের নামে তারা কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভাঙন কবলিত রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাটরি ইউনিয়নে গত এক মাসে ভাঙনে বিলীন হয়েছে অন্তত দেড় কিলোমিটার এলাকা। ভাঙন অব্যাহত থাকায় সেখানকার মানুষ নির্ঘুম রাত পার করছেন। তারা জানান, এখানকার কাঁচা সড়কগুলো নদীতে চলে গেছে। এখন বাকি বাড়িগুলোও। এখনে ভাঙন প্রতিরোধ করা না গেলে একদিন গ্রামটাই বিলীন হয়ে যাবে।
পানি বিশেষজ্ঞ তারানা জাফর জানান, বাংলাদেশ অংশে ১১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদীর ১শ’ কিলোমিটারই ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষার আগেই এর বিভিন্ন অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। তিস্তার আগ্রাসনে প্রতিবছর ক্ষতি হচ্ছে অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা। সরকার জোড়ালো কোন কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় কোন এক সময় রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, তিস্তায় প্রায় ১শ’ কিলোমিটারের মতো জায়গা ভাঙন প্রবণ এলাকা। এখানে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির প্রচেষ্টায় আছি। এটি হতে সময় লাগবে। তবে এর বাইরে যদি ভাঙন দেখা দেয়, তাহলে আমরা সেখানে গতবছরের মতো জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবো।
জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের জন্য প্রতিবছর আপনারা চেষ্টা করেন তার পরেও তিস্তার ভাঙন রোধ করতে পারছেন না কেন? এই উত্তরে তিনি জানান, নদীর তলদেশ পলিতে ভরে গেছে। পানির রিজার্ভ ধরে রাখতে পারে না। স্রোত যেদিকে প্রবাহিত হয় সেদিকে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। নদী ড্রেজিং করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
রংপুর তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে তিস্তা শাসন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পাউবো প্রতিবারই নতুন নতুন প্রকল্প হাজির করে। তবে এসব প্রকল্পকে টাকা অপচয় ছাড়া আমরা কিছু মনে করি না।
বর্ষার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসব প্রকল্প তৈরি করে তাদের নিজেদের উন্নয়নের জন্য। এসব বন্ধ করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে সুনির্দিষ্ট কাজ রয়েছে, সেটি শুরু করতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।