পরকিয়ার কারণে হত্যাসহ লাশ গুম মামলার রায়
কোর্ট রিপোর্টার : বগুড়ায় ফুফাতো ভাইয়ের সাথে পরকিয়ার করণে স্বামী ইজিবাইক চালক আশিক মিয়া (২৩) কে নির্মমভাবে হত্যাসহ লাশ বাঙ্গালী নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে গুমের মামলার রায়ে অভিযুক্ত প্রেমিক শিবলু ফকির (২৪) সহ ৩ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং নিহত আশিক মিয়ার স্ত্রী মিনা (২৫) কে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি তিনজন হলো বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুটিবাড়ীর মোঃ ছফু খাঁর ছেলে ও গৃহবধু মিনা বেগমের প্রেমিক শিবলু ওরফে ফকির (২৪), রামনগর (তরফদারবাড়ী) এর মৃত সিরাজুল ইসলাম তরফদারের ছেলে শান্ত মিয়া ওরফে নয়ন ওরফে সিয়াম (২৩) ও আমতলী দক্ষিণপাড়ার তরিকুল মন্ডলের ছেলে নাইম (২৫)। এই মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদশপ্রাপ্ত আসামী একই উপজেলার হাটফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার নিহত আশিক মিয়ার স্ত্রী মিনা বেগম (২৫)।
এছাড়াও নিহত আশিক মিয়ার লাশ গুমের দায়ে ওই ৪ আসামির প্রত্যেককে ২ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদন্ডদেশপ্রাপ্ত ওই ৩ আসামির গলায় রশি দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বগুড়ার ১ম অতিরিক্ত দায়রা জজ হাবিবা মন্ডল আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে এই মামলার রায় দেন।
রায় ঘোষণার পর আসামিদেরকে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ী মধ্যপাড়ার মৃত সালাউদ্দিনের ছেলে আশিক মিয়ার সাথে মিনা বেগমের ঘটনার ৪ বছর পূর্বে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর তাদের মহিন (৩) নামের একটি ছেলের জন্ম হয়। এর মধ্যে আসামি মিনা বেগমের সাথে তার ফুফাতো ভাই শিবলু ওরফে ফকিরের পরকিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং বিষয়টি তার স্বামী হাতে নাতে ধরে ফেলে।
এ ব্যাপারে স্বামী আশিক মিয়া মিনা বেগমকে নিষেধ করাসহ শাসন করে। এনিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরই এক পর্যায়ে গত ২০২০ সালের ২ অক্টোবর প্রতিদিনের মত সকালে আশিক মিয়া ইজিবাইক নিয়ে চালোনোর জন্য বাড়ি হতে বের হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মৃত্যুদন্ডদেশপ্রাপ্ত আসামিরা আশিক মিয়ার ইজিবাইকে ওঠে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে এবং এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধ করাসহ গোপনাঙ্গে আঘাত করে হত্যা করে আসামিরা লাশ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এরপর গুমের জন্য লাশটি বাঙ্গালী নদীর পানিতে ফেলে দেয়। এদিকে ওইদিন রাত ১১টা পর্যন্ত আশিক ইজিবাইক নিয়ে ফিরে না এলে ইজি বাইকের মালিক আলমগীর হোসেন রাত ১১টার আশিকের বাড়িতে মোবাইল ফোন করে। পরে বাড়ির লোকজন বিভিন্নস্থানে আশিকের খোঁজ করে না পেয়ে আসামি মিনা বেগম নিজেকে আড়াল করার লক্ষে সারিয়াকান্দি থানায় জিডি করে যে, তার স্বামী আশিক নিখোঁজ হয়েছে।
এতে পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে সে হত্যাকান্ডের ঘটনা স্বীকার করে অপর আসামিদেরও নাম বলে। ওই ঘটনার ২ দিন পরে ৪ অক্টোবর সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ছাগলধরা পূর্বপাড়া এলাকয় বাঙ্গালীি নদীর পানির মধ্যে হতে আশিকের লাশ উদ্ধার করে। আসামিরা আশিককে হত্যা করে লাশ গুম করার জন্য ওই স্থানে ফেলে দেয়।
পুলিশ ৪ আসামিকে গ্রেফতার করলে তারা সকলেই হত্যাকান্ডের ঘটনা স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দী প্রদান করে। এব্যাপারে নিহত আশিক মিয়ার বড় ভাই আনিছ ইদ্দিন বাদি হয়ে ওই আসামিদের বিরুদ্ধে সারিয়কান্দি থানায় এই মামলা দায়ের করে।
মামলাটি সারিয়াকান্দি থানার এস আই মোঃ মাহমুদুর রহমান তদন্ড শেষে ওই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি পরিচালনা করেন বাদি রাষ্ট্র পক্ষে এপিপি এড. আব্দুর রাজ্জাক খান এবং আসামি পক্ষে এড. মন্তেজার রহমান. এড. আবু বক্কর সিদ্দিক. এড. বাবলু।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।