বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : সেতাবগঞ্জ চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পর বর্জ্য শোধনাগার পুরোপুরি নির্মাণ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায় চিনিকলের চিনি উৎপাদন। ফলে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও আলোর মুখ দেখছে না বর্জ্য শোধনাগারটি। শোধনাগার তৈরিতেই তুষ্টি বলছেন রসিকজনেরা।
জানা যায়, দিনাজপুরের চিনিকলের কারণে এক সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণায় মুখর থাকতো সেতাবগঞ্জ তথা বোচাগঞ্জ উপজেলা। এক সরকারি আদেশে বন্ধ হয়ে যায় সেতাবগঞ্জ চিনিকল লিমিটেডের আখ মাড়াই।
সেই সেতাবগঞ্জ চিনিকলসহ দেশের ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনের উদ্যোগ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ও বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে বর্জ্য শোধনাগারের কাজ শুরু হয় ১ জুলাই ২০১৮ সালে। কাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ৩০ জুন ২০২০।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লি. ঢাকার সাথে বেধে দেওয়া সময়ের অতিরিক্ত সময় পার হলেও সেতাবগঞ্জ চিনিকলের শোধনাগারটি এখনও কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেনি। শোধনাগার প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতিটি ৮ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বন্ধ ৬টি চিনিকলের বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে গড় হিসেব মতে মোট ব্যয় ৪৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের ৬টি চিনিকলের সাথে প্রায় ৪ শ’ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে সেতাবগঞ্জ চিনিকলটির আখ মাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেকেই বলছেন, দেশের ১৪টি চিনিকলের মধ্যে ৬টিতে চিনি উৎপাদন বন্ধ করা হবে জেনেও রাষ্ট্রের এই বিশাল অংকের টাকা কেন ব্যয় করা হলো চিনি উৎপাদনে বন্ধ থাকা ৬টি চিনিকলে।
যেখানে চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারীরা তাদের কর্ম জীবনের শেষ সম্বল গ্রাচুইটির টাকা পাচ্ছে না ২০১৬ সাল থেকে। দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকলেরই গ্রাচুইটির পাওনা ২১৬ জন শ্রমিক কর্মচারীর প্রায় ১২ কোটি টাকার। সেতাবগঞ্জ চিনিকলের বর্জ্য পরিশোধানাগার (ইটিপি) এখন চিনিকলের সৌর্ন্দযবর্ধক স্থাপনা মাত্র। যা চিনিকলের কোন কাজেই আসছে না।
সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ন কবীর জানান, এই চিনিকলের বর্জ্য শোধনাগারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লি. ঢাকা আমাদের কাছে এখনও হস্তান্তর করেনি। তবে চিনিকলের উৎপাদন চালু থাকলে স্থাপিত শোধনাগারটির ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যেত।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অবশ্যই কোন একদিন সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি উৎপাদনে ফিরে আসবে এবং বর্জ্য শোধনাগারটি চালু হবে। এই বন্ধ ৬টি চিনিকল চালু হলে গড় হিসেবে প্রায় ২৫ হাজার মে.টন চিনি স্থানীয়ভাবে প্রতি বছর উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তখন চিনির মূল্যে স্থিতি ফিরে আসবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।