নামমাত্র মূল্যে ভাড়া না দিতে কাউন্সিলররা একাট্টা
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া পৌরসভার মালিকানাধীন সপ্তপদী মার্কেটের পশ্চিমে এক সময়ের পানির রিজার্ভারের স্থলে টিনসেড মার্কেট গড়ে তোলা হচ্ছে। গত মার্চ মাসে টিন সেড ওই ফলের দোকানগুলোতে অগ্নিকান্ডের পর দোকানিরা পৌরসভার অনুমতি ব্যতিরেকে নিজেদের মত করে দোকান ঘর নির্মাণ করে নিয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পৌর সভার অনুমতি ও নক্শা ছাড়া দোকান ঘর নির্মাণ করায় পৌরকতৃপক্ষের কতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রায় দেড়শ বছরের বেশি বয়সী বগুড়া পৌরসভার আয়তন প্রায় ২০ বছর আগে ১৪ বর্গ কিলোমিটার থেকে প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার করা হয়েছে। আয়তন ৫ গুণ বাড়লেও চোখে পড়ার মত উন্নয়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর পরই শহরের জিরো পয়েন্টে সপ্তপদী মার্কেট নির্মাণ করা হয়। শহরের সড়ক সম্প্রসারণের সময় ওই মার্কেটের পূর্ব এবং দক্ষিণ পাশের কিছু অংশ অধিগ্রহণ করে রাস্তা করা হয়েছে।
সপ্তপদী মার্কেট নির্মাণের সময় মার্কেটের অগ্নি ঝুঁকি কমাতে মার্কেটের পশ্চিমে ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে সেখানে ফোয়ারা বানানো হয়। এক সময় ফোয়ারা নষ্ট হয়ে গেলে রিজার্ভার ঢেকে দেওয়া অবকাঠামোর উপরে আর্বজনা ফেলা শুরু হয়। ক্রমে ওই স্থান অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যায়। এ অবস্থায় ২০১১ সালে দখলদারদের উচ্ছেদ করে অস্থায়ীভাবে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া প্রদান করা হয়।
তৎকালীন মেয়র এড. একেএম মাহবুবর রহমানের সময় এই ভাড়া প্রদান করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীরা নিজেদের মত করে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। গত রমজান মাসে ওই ফল মার্কেটে আগুন লাগে। আগুনে সব দোকান পুড়ে যায়।
আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর দোকানিরা পৌরসভার অনুমতি ছাড়াই সেখানে আধাপাকা টিন সেড ঘর নির্মাণ করে দখলে নেয়। শহরের জিরো পয়েন্টে কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই দোকান ঘর নির্মাণ করলেও পৌরকতৃপক্ষ নূন্যতম বাধা দেয়নি। ফলে তারা নিবিঘ্নে দোকান ঘর নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে। পরবর্তীতে পৌরসভা কতৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পৌরসভায় ডেকে নিয়ে চেক প্রদান করে।
পরবর্তীতে অন্যরা আরেক সাইডে দোকান ঘর নির্মাণ শুরু করলে পৌর কতৃপক্ষ সেখানে বাধা দেয় এবং পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে। বর্তমানে ঘরগুলো সম্পন্ন হওয়ার পথে। এদিকে নতুন করে ঘর নির্মাণে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত হলেও কোন নক্শা করা হয়নি। ওই সভায় প্রতি বর্গফুট ১০০ টাকা হারে ভাড়া প্রদান করা সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন না এমন কয়েক জন কাউন্সিলর জানান, প্রতিবর্গফুট মাত্র ১০০ টাকা এটা খুবই সামান্য অর্থ। এটি হতে দেওয়া হবে না। তারা বলেন পৌর সভার মেয়রের সাথে কথা বলে উন্মুক্ত দরপত্র আহবানের মধ্যে দিয়ে দোকানঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটির বৈধতা প্রসঙ্গে ওই কাউন্সিলররা বলেন, এর পিছনে এমন কেউ আছেন, যারা মেয়রকে ভুল বুঝিয়ে এটি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন।
বগুড়া পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান জানান, কোনভাবেই নামমাত্র মূল্যে দোকান ঘর বরাদ্দ দেওযা যাবে না। যা করার টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১১ সালের দিকে তৎকালীন মেয়র এড. একেএম মাহবুবর রহমান মাত্র ১৭ টাকা বর্গফুট দরে অস্থায়ী ভাবে ভাড়া দিয়ে ছিলেন। বর্তমানে ১০০ টাকা বর্গফুট হারে দিলেও হবে না। কারণ ওই স্থানে একটি ছোট দোকান ভাড়া ৯ থেকে ১২ হাজার টাকা। এর কম হলে দেওয়া ঠিক হবে না।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র পরিমল চন্দ্র দাস জানান, পৌরসভা থেকে কাউকে স্থায়ীভাবে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর কোন ব্যবসায়ীর সাথে আর নবায়ন করা হয়নি। যখন টেন্ডার দেওয়া হবে তখন পুড়ে যাওয়া ঘর এবং নতুন করে করা ঘর সবগুলোই টেন্ডারভূক্ত করা হবে। তিনি আরও জানান, সপ্তপদী মার্কেটে দোকানের সামনে করিডোর ভাড়া দিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩শ’ টাকা হারে নিয়ে থাকেন।
করিডোর ভাড়া দিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ৬শ’ থেকে ৯শ টাকা আয় করেন। সেখানে ১০ থেকে ১২ বর্গফুটের নতুন ঘরগুলো কেমন করে হাজার/১২শ’ টাকা দিয়ে ভাড়া দেওয়ার কথা ওঠে। তিনি আরও জানান ফল পট্টির যে দোকান রয়েছে তার সামনে রাস্তা ভাড়া দিয়ে ওই দোকানিরা প্রতিদিন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আয় করেন। রাস্তা ভাড়া দিয়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আয় যারা করেন; তারা কেন মাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিবেন না। শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে ওই দোকানগুলো সর্বোচ্চ ভাড়ায় টেন্ডার দেওয়া হবে।
প্রথমবার না হলে পরবর্তীতে আবার টেন্ডার দেওয়া হবে। কিন্তু কম ভাড়া দিয়ে পৌরসভার ক্ষতি করা যাবে না। এদিকে বগুড়ার ইতিহাসবিদ সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রহিম বগড়া জানান, যে স্থানে পৌরসভা টিনসেড মার্কেট নির্মাণ করছে, সেখানে এক সময় পানির রিজার্ভার ছিলো।
রিজার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সপ্তপদী মার্কেটের পশ্চিম দিক থেকে সাবেক উত্তরা সিনেমা হল হয়ে এক নাম্বার ঘুমটি পর্যন্ত রাস্তা ছিলো। সাবেক উত্তরা সিনেমা হল এক সময় পাটের গোডাউন ছিলো। ট্রেনে করে পাট এনে গরুর গাড়ি দিয়ে বহন করে ওই গোডাউনে নেওয়া হতো আবার বের করে অন্যত্র নেওয়া হতো।
কালক্রমে ওই রাস্তা দখল হয়েছে। ভূমি দস্যুরা ভূয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে রাস্তার জমি দখল করে নিয়েছে। ফলে ওই রাস্তাটি আর নাই। ওই রাস্তা সিএস ম্যাপেও ছিলো। তিনি আরও বলেন, যাদের কারণে রিজার্ভার বন্ধ করা হয়েছে, তাদের ঘরে আগুন লাগলে নিভানোর পানি পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।