মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের আশপাশে গোলাগুলি এবং মর্টার শেল ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ থেমে গেছে। নাফ নদীর মোহনায় অবস্থানরত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি শুক্রবার (১৪ জুন) সন্ধ্যা থেকে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে, একইদিন রাত একটায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিকল্প রুটে বঙ্গোপসাগর হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যবোঝাই একটি জাহাজ দ্বীপটিতে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কয়েকদিন ধরেই টানা গোলাগুলি চলছিল। তাদের আকাশে যুদ্ধবিমানও দেখা গিয়েছিল। তবে শুক্রবার সন্ধ্যার পরে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের শাহ পরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় দুই দিন ধরে অবস্থান করা মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি সেখান থেকে সরে গেছে। যুদ্ধজাহাজটি পরে মিয়ানমারের জলসীমানায় অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংদিয়া অংশে অবস্থান করছিল। গতকাল সন্ধ্যার পর সে স্থান থেকেও সরে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী।
ইউএনও বলেন, ‘‘শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার বেলা একটা পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আর কোনো গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি এসব তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে বড় জাহাজটি অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি একের পর এক মিয়ানমার থেকে সার্ভিস ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ জন্য আপাতত এ নৌপথ দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সার্ভিস ট্রলারগুলো বিকল্প পথ সাগর উপকূলীয় পথেই সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করবে।’’
এদিকে, শুক্রবার রাত ১টার পর চাল, ডাল, তেল, পানি ও পেঁয়াজসহ নানা ধরনের ভোজ্যপণ্য নিয়ে একটি জাহাজ সেন্টমার্টিনে পৌঁছেছে। কক্সবাজারে আটকা পড়া অনেকে জাহাজে করে ফিরেছেন দ্বীপে। আবার শনিবার (১৫ জুন) সকালে জাহাজ ফেরার পথে দ্বীপ ত্যাগ করেন কেউ কেউ।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা জানান, জাহাজে করে নিত্যপণ্য পৌঁছানোয় আগের তুলনার জিনিসপত্রের দাম কমেছে। কিন্তু আগের মতো টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচল স্বাভাবিক না হলে ফের সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘৯ দিন পর জাহাজে করে প্রবাল দ্বীপে খাদ্যপণ্য এসেছে। যার ফলে মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিডিসহ জেলেদের জন্য সহায়তা এসেছে। সেগুলো আমরা বিতরণ করছি। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পাঠানো পাঁচটি কোরবানির পশু মানুষের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের চলাচল স্বাভাবিক হয়ে গেলে দ্বীপের মানুষের মাঝে পুরোপুরি স্বস্তি ফিরে আসবে। আগে থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পূর্বে মিয়ানমারের জলসীমায় তাদের দেশের দুটি জাহাজ দেখা গেলেও কয়েক দিন ধরে ৫-৬টি জাহাজ দেখা যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে আমাদের অস্বস্তির কোনও কারণ নেই। কারণ, দ্বীপে আমাদের জলসীমায় কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর জাহাজ টহলে রয়েছে।’’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘‘সেন্টমার্টিনে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাজে করে নিত্যপণ্য পাঠানো হয়েছে। যার ফলে দ্বীপে খাদ্যসংকট কেটে গেছে। এ ছাড়া কীভাবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুট আগের মতো সচল করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছি আমরা।’’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।