রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা কিংবা রাতে যে কোন সময় জানতে চাইলে বলে দেন-এখন সময় কত! তার বলা সময় হুবহু ঘড়ির কাঁটার সাথে মিলে যায়। রাস্তাঘাটে কেউ বলছেন দাদু সময় কত? আবার পথে ঘাটে শিক্ষার্থীরা তাকে দেখলেও কৌতুহলবশত: জিজ্ঞাসা করেন চাচা সময় কত? তিনিও আনন্দের সাথে বলে দেন সময়ের কথা। ডিজিটাল যুগে তার কাছে নেই কোন ঘড়ি কিংবা মোবাইল অথবা সময় দেখার কোন ডিভাইস। অথচ হাতের দিকে তাকিয়েই বলে দেয়া সময় হুবহু ঘড়ির কাটার সাথে ঘন্টা, মিনিট এমনকি সেকেন্ড পর্যন্ত মিলে যায়। এতক্ষণ অবিশাস্য যে ব্যক্তির কথা বলছিলাম তিনি হলেন, নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার রাতোয়াল গ্রামের ইয়াছিনপুর গ্রামের মৃত মছির প্রামাণিকের ছেলে ইয়াছিন আলী প্রামাণিক (৭৫)। ঘড়ি ছাড়াই সঠিক সময় বলে দিতে পারায় সবার কাছে তিনি এখন ‘ঘড়ি ইয়াছিন’ নামে পরিচিত।
ইয়াছিন আলীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি পেশায় একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী। এই কাঁচামালের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। সংসারে পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। রাতোয়াল গ্রামের শোলারপাড়ে সরকারের খাস পুকুর পাড়ে বসতি গড়ে কোন রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে বসবাসরত শোলার পাড় তার নামে এখন ইয়াছিনপুর নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।
ইয়াছিন আলী প্রায় ৩০বছর আগে মেঠোপথে বাইসাইকেল করে বিভিন্ন গ্রামে কাঁচা তরিতরকারী ক্রয়/বিক্রয় করে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় তার হাতেও দামি একটি ঘড়ি ছিল। রাস্তার পাশদিয়ে ঘড়ি পরে যাচ্ছিলেন এক বয়স্ক লোক। কৌতুহল বশতঃ ইয়াছিন ওই লোককে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার ঘড়িতে এখন সময় কত? কিন্তু ওই লোক সময় জানাতে পারেনি। এমনকি সময় জানতে চাওয়ায় ইয়াছিনকে খুব কটু কথা শোনান ওই বৃদ্ধ। সেই সময়ই হাত থেকে ঘড়ি খুলে প্রতিজ্ঞা করেন আর ঘড়ি পরবেন না এবং ঘড়ি ছাড়াই কিভাবে সময় বলে দেয়া যায় তা রপ্ত করতে হবে। যেই পণ, সেই কাজ। ক্রমেই ঘড়ি না দেখেই ইয়াছিন নিখুঁত সময় নির্ণয় করার সাধনা করতে থাকেন। মাত্র ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই রপ্ত করে ফেলেন ঘড়ি না দেখে নিখুঁত সময় বলে দেয়ার কৌশল। প্রথমে বেশ এলোমেলো হলেও পরে তা সম্পূর্ণ আয়ত্তে এসে যায়।
সেই থেকে ধীরে ধীরে এলাকায় প্রচার হতে থাকে তার ঘড়ি না দেখে সময় বলে দেয়ার এই কাহিনী। গ্রামে গ্রামে ঘুরে এখনও বাইসাইকেল নিয়েই কাঁচামাল বেচা-কেনা করছেন ইয়াছিন আলী। গ্রামের উৎসক মানুষ মাঠের কৃষক-কৃষাণীরা তাকে দেখলেই সময় জিজ্ঞেস করেন। তিনিও ঘড়ি না দেখে সময় বলে দিয়ে আনন্দিত বোধ করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।