দিনাজপুর প্রতিনিধি :  দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় আশরাফুল (২২) নামে এক ইজি বাইক চালককে গলা কেটে অটো ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া দুষ্কৃতকারী চক্রের এক সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সৈয়দ পুর মিস্ত্রি পাড়া এলাকার মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মোকছেদুল মোমিন (২৩), বিরল উপজেলার দোগাছি গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে মো. জামাতুল ইসলাম(২৮) এবং দিনাজপুর সদরের পশ্চিম মিশন রোড এলাকার মৃত মঈন খানের ছেলে মো. রাজন (৪২)।

গত ৪ জুন রাত ১০টায় চিরিরবন্দর উপজেলার ৩নং ফতেজংপুর ইউনিয়নের ঠাকুরের হাট এর উত্তরে জোতরঘু গ্রামের ফাঁকা রাস্তায় এ ঘটনাটি ঘটে। ইজি বইক চালক আশরাফুল ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় এবং বর্তমানে সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর মিস্ত্রিপাড়া এলাকার মো. হায়দার আলীর ছেলে। এ ঘটনার পরপরই অটো চালক আশরাফুলের বাবা বাদী হয়ে চিরিরবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।

চিরিরবন্দর থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার নীলফামারী, ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন জোড়াবাড়ি গ্রামের রেলস্টশন সংলগ্ন  হাসানুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বাসা থেকে মোঃ মোকসেদুল মোমিন (২৩)কে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকাসহ তার সহোযোগী অপর আসামীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্য মতেই  ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকের ব্যাটারিসহ  দিনাজপুর চাউলিয়াপট্রি থেকে ভাংগারী ব্যবসায়ী জামাতুল  ইসলাম ও চোরাই মাল ক্রয়কারী মোঃ রাজনকে গ্রেফতার করা হয় । মুল ঘটনার সাথে জড়িত অপর দুই আসামি আলামিন ও বাবু পলাতক রয়েছে।
আজ শুক্রবার (২১ জুন) সকালে দিনাজপুর সদর সার্কেল অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ জিন্নাহ আল মামুন।

এসময় তিনি বলেন, আসামী মোকছদুল মোমিনসহ তার সহযোগীরা সৈয়দপুর থেকে রিজার্ভ ভাড়া করে চিরিরবন্দর উপজেলার ৩নং ফতেজংপুর ইউনিয়নের ঠাকুরের হাট এলাকার জোতরঘু গ্রামের নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে অটোচালক আশরাফুলকে প্রথমে দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করে অটোচালক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে অটোচালক প্রতিহত করার চেষ্টা করলে দুষ্কৃতকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে অটোচালকের গলা কেটে শ্বাসনালিতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে মৃত্যুপ্রায় অবস্থায় ফেলে রেখে অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে অটোচালককে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে আশরাফুলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সে আশংকামুক্ত রয়েছে।

এ ঘটনার অপর দুই আসামী আলামিন ও বাবু ইজিবাইকের ৫টি ব্যাটারি ৩৮হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়ে টাকা ভাগাভাগি করে নেয় । তার দেয়া তথ্য মতেই দিনাজপুর চাউলিয়াপট্টি থেকে চোরাই মাল ক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত মোঃ রাজনকে ও ভাংগারী ব্যবসায়ী জামাতুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া মহারাজা মোড়ে গুলজার নামক এক ব্যাটারি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫টি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ জিন্নাহ আল মামুন আরও বলেন যে, আসামীরা প্রত্যেকেই পরস্পরের পরিচিত এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর দুই আসামিকেও খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

আটক আসামিদের কাছ থেকে ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক, ৫টি ব্যাটারি, একটি ধারালো রক্ত মাখা চাকু, একটি রক্ত মাখা নাইলনের দড়ি, চালকের এক জোড়া বার্মিজ জুতা ও রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চিরিরবন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জাকির হোসেন, এস আই মোঃ  রনি ও এস আই সুরথ চন্দ্র রায় ।