গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি : দেশে আম উৎপাদন ও বিপণনে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা। আর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তর আমবাজার হচ্ছে রহনপুর। রহনপুর রেলস্টেশনের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা এ আমবাজারের ঐতিহ্য বহুদিনের।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্তমান সময়ে আম উৎপাদন হলেও দীর্ঘ সময় ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আম উৎপাদনে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে নানান পদের বাহারী নামের আম পাওয়া যাচ্ছে।
চলতি জুন মাসের ১ম সপ্তাহে মৌসুম শুরু হলেও এখন মধ্য সময়ে বাজারে লক্ষনভোগ, বি খিরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়া, ফজলী, আম্রপালী আম বাজারে দেখা যাচ্ছে। মৌসুমের শেষ দিকে আশ্বিনা আমের দেখা মিলবে।
এছাড়া আর কয়দিন পর বারী ফোর ও এগার, কাটিমনসহ নানান জাতের বারোমাসি আম বাজারে পাওয়া যাবে। থাকবে একেবারে আগস্টের শেষ অবধি। এর মধ্যে কয়েক জাত যেমন কাটিমন, বারী-১১, বারী-৪ আম প্রায় সারাবছর পাওয়া যায়।
তবে এবার আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে আম উৎপাদন কম। ফলে দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। গোপালভোগ প্রায় শেষের দিকে। এখন বাজারে হিমসাগর, ল্যাংড়াসহ অন্যান্য আম রয়েছে। গোপালভোগ দাম গিয়ে ঠেকেছে ৪৫০০ টাকা মণ দরে। হিমসাগর, ল্যাংড়া মিলছে ৩৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা মণ দরে। বিভিন্ন জাতের গুটিআম পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার এর মধ্যে। লক্ষণভোগ ২ হাজার থেকে শুরু হয়ে ৩ হাজার টাকা গিয়ে ঠেকেছে। আম্রপালী আম ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আরও বিভিন্ন জাতের আম প্রায় দ্বিগুণ দামে। বিক্রি হচ্ছে। রহনপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন আমবাজারে প্রায় শতাধিক আমআড়ত গড়ে উঠেছে। সেখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক ও কুরিয়ার সার্ভিসযোগে আম দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। প্রকৃত আম ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মৌসুমী আম ব্যবসায়ীরাও আম বিপণনে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও আমবাজার কেন্দ্রিক প্রায় সহস্রাধিক লোক প্রতিদিন কর্মরত থাকে।
আমের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা হয় গোমস্তাপুর উপজেলা আমচাষী ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তালেব বলেন, প্রকৃতির বিরূপ আবহাওয়ার ফলে আমের উৎপাদন কম। তবে গত দু-তিন বছর আমের উৎপাদন ভালো হয়েছিল কিন্তু আমের দাম না থাকায় আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো লাভের মুখ দেখতে পায়নি। কিন্তু এবার আমের দাম ভালো থাকায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভের আশা করছে।
রহনপুর আম আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, রহনপুরের প্রায় শতাধিক আম আড়তদার এখন আম ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন তারা রহনপুরের আম বাজার থেকে আম ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক আম পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, এবার উপজেলায় ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হচ্ছে। এবছর প্রায় ৮৫% আমের মুকুল হয়েছে। এবছর শীতের প্রকোপ দীর্ঘস্থায়ী হওয়া ও কুয়াশাচ্ছন্নের কারণে মুকুল কম এসেছে।
আমরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রতি বছরের ন্যায় আমের ভালো ফলনের জন্য সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করার জন্য আম চাষিদের সাথে কথা বলেছি এবং পরামর্শ দিয়েছি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।