ভিডিও

‘সাইকেল চাই না, আমার বাবার লাশটা এনে দেন’

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৪, ০৯:১৩ রাত
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৪, ০৯:১৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মাদারীপুর প্রতিনিধি: কোরবানির ঈদের পরের দিন বাবার কাছে একটি সাইকেল চেয়েছিলাম, বাবা আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আর সাইকেল চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে শেষবারের মতো একটু দেখতে চাই। আমার বাবার লাশটা দেশে এনে দেন।’ কান্না করতে করতে এ কথাগুলো বলছিল মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মিলন মাতুব্ববের ৯ বছর বয়সী ছেলে আবির।

বাবাকে একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে শিশু আবির আরও বলে, ‘আমি বড়। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। আমি মাদ্রাসায় পড়ি। আমার বাবা সৌদিতে মারা গেছে। এখন আমার মাদ্রাসার খরচ কে দেবে? আমাদের দেখার মতো কেউ নাই। আপনারা আমার বাবাকে এক নজর দেখার ব্যবস্থা করে দিন।’

 

স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ৫ বছর আগে সৌদি যায় পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেঝ।

রিয়াদের হালুজারায় কাজ করেও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেননি মিলন। আকামাসহ নিজ খরচ শেষে কোনো রকম টেনেটুনে সংসারের খরচ চালাতেন। গত ১৮ জুন রাতে বাসায় ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলন। এ সময় একই সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি  প্রবাসীরা তাকে রিয়াদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ৬ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিলন।  রোববার (২৩ জুন) দুপুরে সৌদি থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর জানালে স্বজনদের মাঝে আহাজারি শুরু হয়।

মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন, কেরামত আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মিলনের কয়েক লাখ টাকা দেনা রয়েছে। তবে তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা চাই সরকার যেন মিলনের লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে। আমরা যেন অন্তত তাকে দাফন করতে পারি।

মিলনের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেখার মতো কেউ রইল না। আমাদের তিন ছেলেকে এখন কে দেখবে? আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার দেনা। এই দেনা কিভাবে শোধ করব। আমার স্বামীর লাশটা দেখতে চাই। কিন্তু সৌদি থেকে টাকা খরচ করে লাশ দেশে আনার সামর্থ্য আমাদের নাই। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।’

অপরদিকে শেষ বারের মতো ছেলের লাশ দেখতে একইভাবে সকলের কাছে আকুতি জানান মিলনের মা ও বাবা।

এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে লাশটি দেশে আনার চেষ্টা করব। তবে আর্থিক সহযোগিতা করার মতো আমাদের কাছে কিছু নেই। কিন্তু আবেদন করলে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করব।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS