খাৎনা করতে ঘুমের বড়ি দিয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার : শিশুর মুসলমানী (খাৎনা) করতে গিয়ে ভূল চিকিৎসায় ওমর ফারুক (১৫মাস) নামের এক শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রামে শিশুটির নানা তোজাম্মেল হোসেনের বাড়িতে।
ওই শিশুটির পিতা মো: আব্দুল মোমিন জানান, তার শিশু পুত্র ওমর ফারুকের লিঙ্গে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসক তাকে মুসলমানী করে নেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি রেজি: চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে পাশ^বর্তী নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার পাহারপুর বাজারে শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি চেম্বার দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন তার কাছে যান।
তার চেম্বারে কোন সাইনবোর্ড না থাকলেও নিজেকে মেডিকেল এসিস্টেন্ট পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রামে শিশুটির নানা বাড়িতে যান ওমর ফারুকের মুসলমানী করার উদ্দেশ্যে। এ সময় শিশুটি যাতে মুসলমানী করার সময় ব্যথা না পায় তার জন্য অজ্ঞান করতে ঘুমের ওষুধ এবং এসিডিটির ট্যাবলেট পানি দিয়ে গুলিয়ে শিশুটিকে খাওয়ান।
এরপর একটি ইনকেজশনের সিরিঞ্জে তরল ওষুধ নিয়ে শিশুটির নাভির নিচে প্রয়োগ করেন। ফলে সাথে সাথে শিশুটির খিচুনী শুরু হয় এবং মুখ দিয়ে ফেনা উঠতে থাকে আর শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় শিশুটির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে শহিদুল ইসলাম তাদেরকে শান্তনা দিয়ে বলেন, শিশুটি ঘুমিয়ে পড়েছে। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে পরিবারের সদস্যরা শিশু ওমরকে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরে এলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করার উপদেশ প্রদান করেন। পরে বিকেলে শিশুটিকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে এনে ভর্র্তি করা হয়।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আদনান বলেন, শিশুটিকে ভূল চিকিৎসা দেয়ার ফলে জ্ঞান হারানো গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটির জ্ঞান ফেরার পর তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ প্রদান করলে তারা সেখানে নিয়ে যায়।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) ভোরে শজিমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ৩ নং ইউনিটে গিয়ে দেখা যায় তাকে অক্সিজেন ও স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ঘুমিয়ে পরছে আবার জেগে উঠলেই ছটফট করছে। শিশুটির পিতা মো: আব্দুল মোমিন বলেন, এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে শহিদুল ইসলাম এ ধরণের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
সেটি দেখেই তিনি মনে করেছিলেন যেহেতু অনেকের বাড়িতে গিয়েই শিশুদের খাৎনা করে থাকেন তাই তিনিও তার থেকে শিশু ওমরের খাৎনা করতে চেয়েছিলেন। তবে শহিদুল ইসলাম যে ডাক্তার নন সেই বিষয়টা তার জানা ছিলনা। এ ঘটনায় শিশুটি সুস্থ হওয়ার পর তিনি শহীদুলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানান।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ(শজিমেক) হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. মো: আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শিশু ওমর ফারুকের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে বলেও তিনি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, কোন রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক ছাড়া অপারেশন করার নিয়ম নেই।
গ্রামে গঞ্জে ভূয়া ডাক্তার সেজে চিকিৎসা দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানীর মধ্যে ফেলছে এসব তথাকথিত চিকিৎসকরা। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অধিকতর সচেতন এবং এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার ।
এদিকে শিশু ওমরের চিকিৎসা প্রদানকারি মো: শহিদুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, এ ধরণের মুসলমানী তিনি অহরহ করে থাকেন।
শিশুটিকে তিনি গ্যাসের ওষুধ দিয়েছিলেন যাতে অপারেশনের পর তার এসিডিটি না হয়। আর লোকাল ইনজেকশন দিয়েছিলেন অবশ করার জন্য। এতে শিশুটি ঘুমিয়ে পড়লে তার পরিবারের লোকজন ভয় পেয়ে যায় এবং হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
যার কোন প্রয়োজন ছিলনা। এ ধরণের অপারেশন করা তার আইনগত অধিকার আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম ভূল স্বীকার করে বলেন, এ রকম কাজ আর হবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।