সেই বালুতেই হচ্ছে প্রকল্পের জিও ব্যাগ ভরাট
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণে জিও ব্যাগ বসানোর স্থানের ১৫ ফুটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে সেই বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে। এতে নদীর ভাঙন ঠেকাতে নেয়া তীর প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি অনিয়মের মাধ্যমে ওই প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি করতোয়া নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর মধ্যপাড়া, সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর এলাকার অন্তত সাতটি পয়েন্টে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করে। ফলে করতোয়া নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি, বসতবাড়ি ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়।
এছাড়া বিগত কয়েকদিনের ভাঙনে আব্দুস সাত্তার, মনছের আলী, রুমা বেগমসহ কয়েক জনের ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। পাশাপাশি প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকাও ভাঙনের কবলে পড়ে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত তিনমাস আগে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঙালি নদী খনন করা হয়। নদীটি দশ থেকে পনের ফুট গভীর করা হলেও অপরিকল্পিতভাবে এই খনন কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা। এমনকি তাদের দাবি উপেক্ষা করেই বাঙালি নদী খনন করা মাটি দিয়ে করতোয়া নদীর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফলে বাঙালি ও করতোয়া নদীর মিলনস্থলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। আর এই কারণেই আষাঢ়ের বৃষ্টি ও উজান নেমে আসা পানির চাপে অসময়ে করতোয়া নদীর তীরবর্তী স্থানে ভাঙন শুরু হয়। এদিকে নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, প্রকৌশলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি ভাঙন রোধে জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
আজ শনিবার (২৯ জুন) (দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প এলাকায় যেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হবে, তার দশ থেকে পনের ফুটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে গভীর করে বালু উঠানো হচ্ছে। আবার ওই বালু দিয়েই ভর্তি করা হচ্ছে জিও ব্যাগ। বিগত চারদিন ধরে এভাবেই অবৈধ ওই কর্মযজ্ঞটি চললেও দেখার কেউ নেই।
এসময় বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন ও ব্যবসা করে থাকি। তাই ঠিকাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কথা এড়িয়ে যাওয়া একটু সমস্যা। তাই তাদের অনুরোধে করতোয়া নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে দিচ্ছি, যা দিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে। এসব জিও ব্যাগ নদীর ভাঙন কবলিত তীরবর্তী স্থানে ফেলা হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাই জানেন বলেও দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, করতোয়া নদীর তীরবর্তী ভাঙন ঠেকাতে যেসব জিও ব্যাগ তৈরি হচ্ছে-তার জন্য কোনো বালু কেনা হয়নি। সমস্ত বালু করতোয়া নদীর খানপুর মধ্যপাড়া অংশে জিও ব্যাগ বসানোর স্থানের পনের ফুটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে উঠানো হচ্ছে। এভাবে ভাঙন কবলিত নদীর তীরবর্তী স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙন রূপ নিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এছাড়া প্রকল্প এলাকায় কোনো সিটিজেন চার্ট নেই। তাই প্রকল্প ব্যয় বিষয়ে বিস্তারিত কেউ জানে না বলেও অভিযোগ করেন তারা। জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাজওয়া ট্রেড সিস্টেম লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী রবিন সরকার বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মতি নিয়েই নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে, এতে কোনো সমস্যা হবে না। বরং নদীর চর কেটে যাবে এবং পানি প্রবাহে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, জরুরিভিত্তিতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এ জন্য তাজওয়া ট্রেড সিস্টেম লি. নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে কাজও শুরু করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু নদীর ভাঙন কবলিত তীরবর্তী স্থানে দশ থেকে পনের ফুটের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগ ভর্তির বিষয়টি জানা নেই।
তবে নদীর মধ্যে একটি ডুবুচর রয়েছে-সেটি অপসারণের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। এরপরও একটু খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সুমন জিহাদী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই বিস্তারিত তারাই ভালো বলতে পারবে। এরপরও খোঁজ-খবর নিয়ে দেখি, যদি কোনো অনিয়ম হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।