বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি : বেড়ার সুতা রঙ ও প্রক্রিয়া করার চারটি প্রসেসমিলের বর্জ্যে আত্রাই নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে। বর্জ্যে এলাকার মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, খাস আমিনপুর গ্রামে আত্রাই নদীর পূর্ব পাড়ে গত ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে চারটি প্রসেসমিল গড়ে উঠেছে। কাবুল মন্ডল, সাবান মোল্লা, রফিকুল ইসলাম ও বাবু মোল্লা এসব কারখানার মালিক। কারখানাগুলোতে সুতা রঙ ও প্রক্রিয়া করা হয়।
এসব কাজ করার জন্য কারখানায় ব্যবহার করা হয় নাইট্রিক এসিড, অ্যাসিটিক এসিড, কস্টিক সোডা, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, লবণসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ। এর ফলে কারখানা থেকে প্রতিদিনই বের হচ্ছে প্রচুর বর্জ্য। সেই বর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা না করেই সরাসরি ফেলা হচ্ছে আত্রাই নদীতে। সেখান থেকে বর্জ্য পার্শ্ববর্তী পাঁচ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রসেসমিলের বিষাক্ত বর্জ্যসহ আশপাশের মাছের ঘেরে ঢুকে পড়ছে। এতে গত কয়েক দিনে দুটি ঘেরের অন্তত অর্ধ কোটি টাকার মাছ মরে গেছে। একটি ঘেরের মালিক কবির হোসেন জানান, প্রতি বছর এই প্রসেসমিলের বিষাক্ত বর্জ্যে তাদের মাছের ঘেরের চাষ করা মাছ মারা যাচ্ছে।
এবারও বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে তার ঘেরের ২৫ লাখ টাকার মাছ মারা গেছে। তিনি জানান, প্রসেস মিলের কাছে আত্রাই নদীতে রয়েছে ফিরোজ মিয়ার মৎস্য ঘের। বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলায় ওই ঘেরে থাকা প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ মারা গেছে।
ঘের মালিকদের পক্ষ থেকে থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল করিম জানান, প্রসেস মিলের বিষাক্ত বর্জ্য মানব দেহ ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর কারণে ভূগর্ভস্থ পানিতে কলিফর্ম নামক জীবাণু জন্মায়। নলকূপের এই পানি পান করলে চর্মরোগ ও পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্রসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। একটি প্রসেসমিলের মালিক কাবুল মন্ডলের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি দেশের বাইরে আছেন বলে জানান। দেশে ফিরে এ ব্যাপারে তিনি কথা বলবেন।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-উর রশীদ বলেন, মৎস্য ঘেরের মালিকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. মোরশেদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি শুনেছেন। দ্রুত এ ব্যাপারে তিনি আইনগত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।