উত্তরের নদ-নদীতে আরেক দফা পানি বাড়ছে
করতোয়া ডেস্ক : সিরাজগঞ্জে আগ্রাসী রুপ ধারণ করেছে যমুনা। কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে জেলার প্রধান নদী যমুনাসহ ফুলজোড়, ইছামতি, হুড়াসাগর ও চলনবিলে পানি বেড়েই চলছে। এর সাথে শুরু হয়েছে জেলার শাহজাদপুর,কাজিপুর,সদর উপজেলার যমুনার তীরে তীব্র নদী ভাঙন।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রথম দফা বন্যার পর কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যায় শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে সৃষ্ট বন্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়ার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি বিলীন হয়েছে।
প্রতিনিধিদের রিপোর্ট -
সিরাজগঞ্জ : বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই সিরাজগঞ্জে আগ্রাসী রুপ ধারণ করেছে যমুনা। কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে জেলার প্রধান নদী যমুনাসহ ফুলজোড়, ইছামতি, হুড়াসাগর ও চলনবিলে পানি বেড়েই চলছে।
এর সাথে শুরু হয়েছে জেলার শাহজাদপুর,কাজিপুর,সদর উপজেলার যমুনার তীরে তীব্র নদী ভাঙন। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছে অনেক মানুষ। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই যমুনাপাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জের কাজিপুর,সদর,চৌহালী,এনায়েতপুর,শাহজাদপুর উপজেলায় নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। নদীতে পানি বাড়া শুরু হলেই রাক্ষুসে যমুনা আঘাত হানে দুই পাড়ে।
প্রবল স্রোতের তোড়ে নদী তীরের ঘরবাড়ি,আবাদি জমি সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। যুগ যুগ ধরে চলছে তার ভাঙন লীলা খেলা। বার বার এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব^,কর্মহীন। নদী ভাঙন প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা কোন কাজেই আসেনি।
এবারও বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে শুরু হয়েছে নদী ভঙন। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের সানবান্ধাঘাট হতে বিশুরিগাছাঘাট ও শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের পাঁচিল, হাটপাঁচিল, জালালপুর ও সৈয়দপুর গ্রামে রাক্ষসী যমুনার তীব্র ভাঙন চলছে।
গত দুই সপ্তাহে এসব এলাকার অসংখ্য মানুষের কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক ঘরবাড়ি, স্থাপনা। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, নদীর পূর্বপাড়ে চর জেগে ওঠার কারণে প্রকল্প এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য নদীতে খনন কাজ চলছে। ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা চিহ্নিত করে জিও ব্যাগভর্তি বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রথম দফা বন্যার পর কয়েকদিনের টানা বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যায় শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় দফায় আকস্মিকভাবে বন্যার পানিতে জিঞ্জিরাম, হলহলিয়া, ধর্ণি, সোনাভরি, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি উপচে প্লাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। প্রচুর বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা প্রবল স্রোতের পানিতে এ নদীগুলো ভরাট হয়ে বন্যায় পরিণত হয়ে যায়। অন্যদিকে শুল্ক স্থলবন্দরে বন্যার পানি উঠায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকারত্বে দিনযাপন করছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। অনেক বাড়ি ঘরে পানি উঠার ফলে এক বেলা না খেয়ে জনদুর্ভোগ পোহাতে হয় অনেক পরিবারকে। দ্বিতীয় দফায় বন্যার পানিতে সদ্য রোপণকৃত আমন ফসলের বীজতলাসহ কৃষকের সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে বন্দবেড়, চরশৌলমারী, রৌমারী, যাদুরচর ৪টি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু, উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সামসুদ্দিন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণসহ অনেকেই।
শুল্ক স্থলবন্দরে শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফক্কু বলেন, কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পানি পাথরের মাঠের উপরে উঠায় হাজার হাজার শ্রমিক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন। তাদেরকে দ্রুত সরকারিভাবে খাবারের সহযোগিতা না করলে তাদের কষ্ট বেড়ে যাবে।
গঙ্গাচড়া (রংপুর) : কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীতে সৃষ্ট বন্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়ার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি বিলীন হয়েছে। এছাড়াও ২৫০টিরও বেশি পরিবার ভাঙন আতঙ্কে তাদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিলেও বাঁচাতে পারেনি তাদের ভিটেমাটি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টিউবয়েল, রান্নার চুলা, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাবার সংকট। এ অবস্থায় পানিবন্দি পরিবারগুলো দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে কয়েক বিঘা জমির বাদাম ক্ষেত ও আমন ধানের বীজতলা। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, দেশের উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘন্টায় মাঝারী থেকে ভারী এবং ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানিপ্রবাহ সাময়িকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
গতকাল বুধবার সরেজমিন উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি, আলফাজ টারী, নরশিং, হরিণচরা, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চর মটুকপুর, চর ছিলাখাল, মধ্য চিলাখাল, লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের চর ইচলি, পশ্চিম ইচলি, চল্লিশসাল। নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডহরা, মিনার বাজার এলাকা ঘুরে দেখা ঘুরে দেখা যায়, বন্যায় ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলো তাদের গবাদিপশু-পাখি সাথে নিয়ে ঠাঁই নিয়েছে রাস্তার ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিভিন্ন খোলা স্থানে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না বলেন, আমাদের কাছে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া এখন পর্যন্ত ২০টি পরিবারের তালিকা আছে। আমরা আরও খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করছি। তবে ভাঙন হুমকিতে থাকায় ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫০টির মতো পরিবার তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।
এবিষয়ে রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু মুঠোফোনে বলেন, আমি আমার তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেছি। তিনি আমার এলাকার তিস্তার ভাঙনে বিলীন হওয়া পরিবারগুলোকে পূর্ণবাসনের আশ্বাস দিয়েছেন।
আমি সংসদ অধিবেশনের কারণে ঢাকায় আছি। আশা করছি, আগামী ১১ তারিখে আমি নিজে গিয়ে আমার তিস্তাপাড়ের ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখব। এছাড়াও আমি সবসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের সাথে যোগাযোগ রাখছি কোথাও ভাঙনের খবর পেলে আমি সেখানে তাদেরকে ভাঙন রক্ষায় দ্রুত জিওব্যাগ ফেলতে বলতেছি এবং তারাও দ্রুত ভাঙন রক্ষায় কাজ করছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।