চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : ‘বাবার চেহারা আবছা মনে আছে, পরিষ্কার মনে নেই। তার কথা যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, তখন বুকটা ফেটে যায়। সব সময় মনে পড়ে। নানা সমস্যার কারণে খুঁজতে বের হতে পারিনি। ইদানিং বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ছিল।
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে বাবার প্রসঙ্গ উঠলে কটূ কথা শুনতে হয়েছে। আমি তো অবৈধ সন্তান নই। আমার তো বাবা আছে। বাবা তো কত বছর আমাদের সাথে ছিলেন। আমার নানার বাড়ি এলাকায় থেকে ব্যবসা করেছেন। কত মানুষ চেনে তাকে। বাবাকে খুঁজতে প্রথম চাটমোহরে এসেছি। কথাগুলো বলতে বলতে বার বার কাঁদছিলেন নড়াইল থেকে পাবনার চাটমোহরে বাবাকে খুঁজতে আসা রূপা খাতুন(২৫)।
এ তরুণী চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকায় তার বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। গত ২ জুলাই বিকেলে চাটমোহর উপজেলা গেট এলাকায় দেখা যায় তাকে। রুপা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম নুর ইসলাম মোল্লা।
রুপা বলেন, ৩০-৩৫ বছর আগে আমার বাবা চাটমোহরের নুর ইসলাম মোল্লা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার শুক্তগ্রামে যান। শুক্তগ্রামের গফফার আলীর সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক স্থাপন করে তার আশ্রয়ে বসবাস শুরু করেন। দুই-তিন বছর গফফার আলীর বাড়িতে বসবাস করেন।
তখন ছোট কালিয়া গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগমকে(রুপার মা)বিয়ে করেন। বিয়ের পর আলতাব মোল্লার বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করতে থাকেন। এলাকায় কাঁচা মালের(সবজি)দোকান দেন বাবা। বড় কালিয়া এলাকায় ছয় শতাংশ জায়গাও কেনেন। তাদের সংসারে আমার এবং আমার বোন নুরজাহানের জন্ম হয়। ভালোই কাটছিল আমাদের সংসার।
তিনি আরও বলেন, শুক্তগ্রাম, ছোট কালিয়া ও বড় কালিয়া এলাকায় ১৪-১৫ বছর বসবাসের পর আমার যখন চার বছর, একদিন বাবা বাঁধাকপি বিক্রি করতে খুলনায় যান। এটি প্রায় ২০ বছর আগের কথা। এরপর বাবা আর বাড়িতে ফেরেননি।
আমার মা, মামারা সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও বাবার সন্ধান পাননি। অভিমানে রহিমা বেগম কখনও স্বামীকে চাটমোহরে খুঁজতে আসেননি। তারা শুধু এটুকু শুনেছেন নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি চাটমোহরের দিয়ার বা দিয়ারা বা এমন নামের কোনো গ্রামে। রহিমা বেগম তার মেয়ে রুপা ও নুরজাহানকে নিয়ে ভাইয়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন।
রুপা জানান, বাবার বয়স এখন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হবে। ৫ ফিট ৬ ইঞ্চির মতো লম্বা। মুখে ছোটছোট হালকা চাপদাড়ি ছিল। বাবার কোনো ছবিও নেই। রূপার মা, মামারা চাটমোহরে বাবার বাড়ি বলেছেন, এটাও সত্য, না মিথ্যা তাও জানা নেই। বাবা বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন তাও জানেন না। যতদূর শুনেছেন তার দাদার নাম আব্দুল মোল্লা। ইদানিং বাবাকে খুব মনে পড়ছে রূপার।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।