স্ত্রীর প্রশ্ন, সংসার চলবে কীভাবে?
স্টাফ রিপোর্টার : পোড়া দেহ নিয়ে নিদারুন যন্ত্রনায় হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করতে করতে অবশেষে ১৮ দিন পর মারা গেলেন বগুড়ার সেউজগাড়ী পালপাড়া এলাকার পরিচিত মুখ রঞ্জন পাল (৫০)। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা উৎসবে রথে বিদ্যুতায়িত হয়ে অনেক পূণ্যার্থীর মত ঝলসে যান তিনিও। এরপর তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পাতবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় মারা যান তিনি। গত ৭ জুলাই বিকেলে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত রঞ্জনসহ মোট ৭ জন মারা গেলেন। নিহত রঞ্জন সেউজগাড়ী পালপাড়া এলাকার মৃত পাঁচকড়ি পালের ছেলে।
রঞ্জন পালের বাবা-মা বেঁচে নেই। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মরদেহ যখন তার বাড়িতে আনা হয় তখন এলাকার মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে। এ সময় তার স্ত্রী ও সন্তানরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্ত্রী-সন্তান ভাই বোনের আহাজারিতে এলাকায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় উপস্থিত অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
তার স্ত্রী স্বপ্না পাল কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, তার স্বামী রঞ্জন পাল ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সিএনজি চালিত একটি অটোরিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় করতেন তা দিয়ে তিনি সংসার চালাতেন। এছাড়া দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচও চালাতেন ওই অটোরিকশা চালিয়েই। তিনি তিন মেয়ের বাবা। কিছুদিন আগে তিনি তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার স্বামীর আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেল। এখন কীভাবে চলবে তাদের সংসার?
রঞ্জন পালের বড় ভাই বিমান পাল জানান, রঞ্জন ছিল সৎ ও পরিশ্রমী। এলাকার মানুষ তাকে খুব ভালো বাসতো। তাকে হারিয়ে সবাই শোকে নিমজ্জিত। তিনি বলেন, ইসকন কর্তৃপক্ষ তার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য এক লাখেরও বেশি টাকা দিয়েছে। সেইসাথে বগুড়া জেলা প্রশাসন ৫ হাজার টাকা দিয়েছে। এই টাকায় তার চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু চিকিৎসা করেও তাকে বাঁচানো গেলনা।
উল্লেখ্য,৭ জুলাই বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় পৌঁছানোর পর স্টেশন রোডে সড়কের উত্তর ধারে যাবার পর রথের চূড়াটি সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া হাই ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসে।
এতে রথের চূড়ায় আগুন ধরে যায় এবং সম্পূর্ণ রথটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। রথটি আবারো টেনে নেয়ার সাথে সাথে রথের সংস্পর্শে থাকা পূণ্যার্থীরা বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসে এবং রথ থেকে ছিটকে পড়তে থাকে।
এতে রথের ওপরে বসে থাকা এবং নিচে থাকা অন্তত একজন ঘটনাস্থলেই নিহত ও ৪০ আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আরও চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
সেইসাথে আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রঞ্জন পাল ও চন্দন দে কে ঢাকায় ওই হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুলাই সকালে চন্দন দে ও ২৫ জুলাই রঞ্জন পাল মারা যান।
নিহত চন্দন দে সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার সাহাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা এবং বগুড়া শহরের দত্তবাড়ি এলাকায় থাকতেন। উল্লেখ্য বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃস্ট হয়ে রঞ্জনপাল মারা যাওয়ায় রথ তা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড স্পর্শ করলো।
গত বছর ভারতের ত্রিপুরায় একইভাবে রথ যানটি উপর দিয়ে যাওয়া হাইভোল্টেজ বিদ্যুতের সংস্পর্শে এলে সাতজন মারা যান। এর আগে ২০২২ সালে অনুরূপ দৃঘটনায় ভারতেরই তামিলনাড়ুতে ১১ জন মারা গেছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।