স্টাফ রিপোর্টার : গত কয়েকদিনের কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে সহিংসতায় সৃষ্ট অস্থিরতা শেষ হতে না হতেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুঃসহ গরম। সহিসংতার কারণে নিজেকে রক্ষা করতে কয়েকদিনের ঘরবন্দি থাকা মানুষ যখন বের হতে শুরু করেছেন তখন এই আগুন ঝরা তাপদাহে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। ঘর থেকে মানুুষ বের হতে পারছেন না।
বাইরে গেলেই দর দর করে ঘাম হচ্ছে। অস্বস্তি নিয়ে যারা বের হচ্ছেন তারা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে উঠছেন। কিছু সময় রোদে থাকার পর স্বস্তি পেতে আশ্রয় নিচ্ছেন কোন গাছের ছায়ায় নয়তো কোন ছায়াশীতল স্থানে। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত মানুষ পান করছে অস্বাস্থ্যকর সব পানীয়। গরম কমার কোন সুখবর দিতে পারছে না আবহাওয়া অফিস।
আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) ছিল বর্ষার দ্বিতীয় মাস শ্রাবণের ১১ তারিখ। অর্থাৎ বাদল-বর্ষার এমাসটি শেষ হতে খুব একটা দেরী নেই। কিন্তু এখনও মিলছে না কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা নেই। সহিংসতার এবং পরবর্তীতে সাধারণ ছুটি ও কারফিউয়ের কারণে প্রায় পুরো সপ্তাহ বন্ধ ছিল অফিস আদালত, যানবাহন চলাচল, ব্যসা প্রতিষ্ঠান। সপ্তাহ শেষে এসে অফিস-আদালত ও সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খুললেও নানা কারণেই এগুলো পরোপুরি চালু হতে পারেনি।
আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) ও আজ শনিবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। একারণে ঘরে প্রায় নি:শেষ হয়ে যাওয়া মাছ-মাংস, কাঁচা বাজার করার অভিপ্রায় ছিল প্রায় সকলেই। কিন্তু পরিবেশের বৈরিতা, তথা বিভৎস গরমের কারণে অনেকেই প্রয়োজনীয় বাজার করতে পারেননি, অথবা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহসই পাননি। ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই আকাশ ফুরে তপ্ত আগুন ঝরছে যেন।
নেই কাঙ্খিত বৃষ্টি, নেই গা জুড়ানো বাতাস। আবারও বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা। আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) বগুড়ার তাপমাত্রা উঠেছে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আকাশ থেকে যেন আগুন ঝড়ছে। তেতে উঠেছে ঘরে বাইরে সবখানে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ। এতে দরদর করে ঘাম হচ্ছে। অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতিতে নাভিস্বাস উঠেছে জনজীবনে। আগামী কয়েকদিনেও আবহাওয়া শীতল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
চলতি বছর যে গরম পড়েছে তা বহু বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। জুলাই মাস শেষ হতে চলল তবু তাপমাত্রার পারদ যেন একটুও নীচে নামতে চাইছে না। বরং তা বেড়েই চলেছে। গত মঙ্গলবার বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রী, গত বুধবার ছিল ৩৪ ডিগ্রী, বুহস্পতিবার ছিল ৩৫ ডিগ্রী এবং আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) তা এক লাফে দুই ডিগ্রী বেড়ে ৩৭ ডিগ্রী রেকর্ড করা হয়েছে। এর ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে আর্দ্রতার আধিক্য। এই অবস্থায় কার্যত তাণ্ডব চালাচ্ছে গরম।
আবহাওয়ার পরিবর্তনে এবার শ্রাবণ মাসেও চৈত্রের উত্তাপ বিরাজ করছে। গত আষাঢ় মাসজুড়েই ছিল গরমের দাপট। এদিকে ঝড়-ঝঞ্ঝার মাস বলে খ্যাত বৈশাখও কেটেছে বৃষ্টিহীন। প্রকৃতির এমন বৈরীতার মধ্যেই শ্রাবণ মাস তার দিনগুলো পার করছে।
বেশ কিছুদিন থেকেই দিনের গড় তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তাপদাহে আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। শুধু কী আকাশ! মাটি, গাছপালা, রাস্তাঘাট সবকিছুই যেন একজোট হয়ে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ছে।
তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে একটু শীতল পরশ পেতে মানুষজন ঘর ছেড়ে গভীর রাত পর্যন্ত গাছতলায় গিয়ে বসে থাকছেন। অতিরিক্ত তাপের ফলে ট্যাপের পানিও ফুটন্ত হয়ে আছে। আর্দ্রতা বেশি থাকায় শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ঘামে জামাকাপড় ভিজে এক অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
এমন অবস্থায় হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষের সাথে সাথে পশু-পাখিরাও। রাত আর দিনের এমন দুঃসহ আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা দুর্বিষহ দিন অতিবাহিত করছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানায়, বর্তমানে বগুড়ার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় মাত্রাতিরিক্ত গরম অনুভূত হচ্ছে। এদিন সকাল ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৮৬ শতাংশ এবং সন্ধ্যা ৩টায় ৫২ শতাংশ। একটানা ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত সূর্যের বর্ষণ ও ভ্যাপসা গরম কমবে না বলেও জানায় সূত্রটি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।