রংপুর জেলা প্রতিনিধি : পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু সিনহা। তার বিশ্বাস বাবা দূরে কোথাও কাজে গেছেন। কয়েকদিন পর বাসায় ফিরবেন। কোলে তুলে নিয়ে আদর করবেন। কপালে চুমু দেবেন। দোকান থেকে নাস্তা কিনে দেবেন। মাদ্রাসায় নিয়ে যাবেন। রাতে বাবার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবেন। সেই আশা নিয়ে প্রতিদিন রাতে অপেক্ষায় থাকে সিনহা।
গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে উঠেই আবারো বাবা বাবা বলে ডাক শুরু করে। কিন্তু বাবার দেখা মেলে না। এভাবেই বাবার অপেক্ষায় কোটা আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত রংপুরের সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেনের মেয়ে সিনহা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সবজি বিক্রেতা নিহত সাজ্জাদ হোসেনের বাড়ি রংপুর নগরীর কামালকাছনা শিক্ষাঙ্গণ এলাকায়। চারিদিকে সুনসান নিরবতা। দুপুরের খাবার আয়োজনের কোন ব্যস্ততা নেই। সবাই চুপচাপ। বিষন্ন মনে ঘরের মেঝেতে সবাই বসে আছেন। সাজ্জাদের বোনরা সবাই বাড়িতে অবস্থান করছেন। সবাই সাজ্জাদের মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চিন্তিত। এখন কিভাবে সংসার চলবে, কি হবে সন্তানের ভবিষৎ। এ রকম হাজারো চিন্তায় নিহত সাজ্জাদের পরিবারের সদস্যদের।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাজ্জাদ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভ্যানে করে আদা রসুন পেঁয়াজ এলাকায় বিক্রি করেন। এরপর দুপুরে জুমার নামাজ আদায় করেন। বাড়িতে স্ত্রী না থাকায় হোটেলে দুপুরের ভাত খান। সাজ্জাদের পরিকল্পনা ছিল পরদিনের জন্য আদা, রসুন, পেঁয়াজ কিনে বাসায় রেখে সন্ধ্যায় শ^শুরবাড়ি যাবেন। শ^শুরবাড়িতে স্ত্রী সন্তান কয়েকদিন থেকে আছেন।
তাদের নিয়ে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবেন। কিন্তু এক গুলিতেই সব শেষ। সাজ্জাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন প্রথম এই সংবাদটি পান সাজ্জাদের দুলাভাই আলী হোসেন। আলী হোসেন বলেন, গত ১৯ জুলাই সাজ্জাদ হোসেন বিকেল সাড়ে ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ের গেট দিয়ে সিটি বাজারে যাওয়ার পথে আকস্মিক পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়ে পড়েন।
অবস্থা বেগতিক দেখে এক পর্যায়ে লুকাতে গিয়ে একটি গুলি পেটের বাম পাশে লাগে সাজ্জাদের। এ সময় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে মৃত ভেবে রিকশায় করে বাড়ির পথে নিয়ে রওয়ানা হন। এক পর্যায়ে সাজ্জাদ বলে ওঠেন আমি বেঁচে আছি। আমাকে বাঁচান। আমাকে মেডিকেল নিয়ে চলেন। এমন আকুতি শুনে পায়রা চত্বর থেকে রিকশা ঘুরিয়ে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা সাজ্জাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সাজ্জাদের স্ত্রী জিতু বেগম জানান, এখন কি করে সংসার চলবে। কে মেয়েকে নাস্তা এনে দেবে। মাদ্রাসার খরচ কে দেবে। নিহত সাজ্জাদের মা ময়না বেগম বলেন, নিস্পাপ ছেলে আমার বাজারে গেল ব্যবসার সবজি কিনতে। আর লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো।
এসময় সাজ্জাদের মা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করলে নাতনি আর বউমা কিছু করে খেতে পারবে। না হলে না খেয়ে মরতে হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।