আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনধি : বগুড়ায় আদমদীঘিতে পৃথক ঘটনায় ঋণগ্রস্ত এক নারী এক পুরুষের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এনজিও’র ঋণের চাপে বিপর্যস্ত পরিনা বেগম (৩১) নামে এক নারীর গলায় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। আজ শনিবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১২ টায় আদমদীঘি উপজেলার নিমাইদীঘি গ্রামে স্বামী শেখ ফরিদের বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আদমদীঘি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের নিমাইদীঘি গ্রামের দরিদ্র শেখ ফরিদের স্ত্রী পরিনা বেগম বিভিন্ন এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তির ভিত্তিতে ঋণ নেয়। এছাড়া তার আত্মীয়দের নিকট থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। ঋণের টাকায় নিজে ইটের বাড়ি ও একটি অটো রিকশা কিনে প্রতি সপ্তাহে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতো।
সম্প্রতি ঋণের চাপে অটো রিকশা বিক্রি করে ঋণের কিছু টাকা পরিশোধ করলেও মোটা অংকের ঋণের বোঝা ছিল তাদের ঘাড়ে। এ অবস্থায় তারা স্বামী স্ত্রী ঢাকায় যায় কাজের সন্ধানে। কয়েক দিন আগে পরিনা বেগম তার স্বামীকে ঢাকায় রেখে নিমাইদীঘি বাড়ি এসে ফ্রিজসহ কিছু সামগ্রী বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরিনা বেগমের বোন আফরোজা বেগম জানান, পরিনার উপর ঋণ পরিশোধের চাপ বেশি হওয়ায় সে প্রায় আত্মগোপনে ছিল। গতকাল শুক্রবার রাতে পরিনা বেগম তার শয়ন ঘরে একাই রাত যাপন করে। পরদিন সকালে তার স্বামীসহ স্বজনরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া না পাওয়ায় ওই বাড়িতে আসেন।
বেলা ১০টায় প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় বাড়ির মেইন দরজা খুলে দেখেন পরিনা বেগম শয়ন ঘরের তীরের সাথে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রয়েছে। শনিবার পুলিশে খবর দেয়া হলে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনা তদন্তকারি থানার উপ পরিদর্শক জানান, ঋণের চাপে সে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা হচ্ছে।
অপর দিকে উপজেলায় বিদেশ থেকে ফেরৎ এসে ধারদেনা করে পরিশোধ করতে না পেরে এরশাদ আলী (৩০) নামে অপর একএক ব্যক্তি বিষপানের ১৪ দিন পর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সে মারা যায়।
এরশাদ আলী আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর ইউপির পালংকুরি গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। এ ঘটনায় আদমদীঘি থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। আদমদীঘি থানায় দায়ের করা মৃত এরশাদ আলীর ভাই সাখাওয়াত হোসেনের লিখিত অপমৃত্যুর সংবাদে জানা যায়, তার ভাই এরশাদ আলী বিদেশে ভাল কাজ না পেয়ে ৫/৬ মাস আগে দেশে ফিরে আসার পর বিভিন্ন লোকজনের নিকট টাকা ধারদেনা করে ঋণগ্রস্ত হয়।
সেই ঋণের টাকা সময় মতো পরিশোধ করতে না পেরে হতাশায় ছিল। গত ২ আগস্ট দিবাগত রাত ৮টায় সে চাঁপাপুর বাজারে বিষপান করে। এ সংবাদ পেয়ে স্বজনরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় অসুস্থ এরশাদ আলীকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার রাত দেড়টায় এরশাদ মারা যায়। পরদিন আজ শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে লাশের ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আদমদীঘি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একেএম মঈন উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।