নওগাঁ প্রতিনিধি : কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় বগুড়ার কলোনীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে চালানো পুলিশের বুলেটে বাম চোখে গুলিবিদ্ধ মেধাবী শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলামের পরিবার ছেলের চিকিৎসায় সরকারি সহায়তা কামনা করেছেন। ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য অর্থের যোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নাফিউলের পরিবার। তারপরও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে কিনা এ নিয়ে কাটছে না শঙ্কা।
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের শুকবর আলীর ছেলে নাফিউল ইসলাম। সে ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি বগুড়া (আইআইটিবি) নামের বেসরকারি পলিটেকনিকে কম্পিউটার বিভাগের চতুর্থ পর্বের শিক্ষার্থী।
ছেলেকে প্রকৌশলী বানানোর আশা নিয়ে নাফিউলকে বগুড়াতে পাঠান তার পরিবার। দেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজের সুন্দর ও স্বাভাবিক ভবিষ্যৎ ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত নাফিউল ইসলাম। তিন ভাইয়ের মধ্যে নাফিউল তৃতীয়।
শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম জানান তিনি সহপাঠিদের সঙ্গে গত ১৭ জুলাই সকালে বগুড়ার কলোনীতে বগুড়া পলিটেকনিকের সামনে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। পরের দিন ১৮ জুলাই বিকেলে মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে একটি গুলি এসে তার বাম চোখের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে ঢুকে পরে। এরপর সহপাঠিরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়।
পরে খবর পেয়েই ১৯ জুলাই ঢাকার ভিশন আই সেন্টারে নিলে সেখানে ব্যয়বহুল চিকিৎসা চলছে। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি থাকায় একাধিকবার অপারেশন করেও এখন পর্যন্ত নাফিউলের মস্তিষ্কের মধ্যে আটকে থাকা গুলি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। বর্তমানে নাফিউল এক চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন। আদৌ নাফিউল আরেক চোখ ফিরে পাবেন কিনা সেই নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
নাফিউলের মা জেসমিন বেগম বলেন এখন আমার ছেলের ভবিষ্যৎ কি? জানি না আমার ছেলে তার আরেকটি চোখ ফিরে পাবে কিনা। আজ শেখ হাসিনার জন্যই আমার ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেলো। তিনি চিকিৎসার জন্য দ্রুত সরকারী সহযোগিতা প্রদানসহ ভবিষ্যতে ছেলের জন্য সরকারী চাকরি কামনা করেন।
নাফিউলের বাবা শুকবর আলী জানান, ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ যোগাতে গিয়ে বর্তমানে তিনি হিশশিম খাচ্ছেন। যে সামান্য জমি-জমা আছে সেই জমিটুকু বন্ধক রেখে নাফিউলের চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই কয়েক লাখ টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়ে গেছে। তার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বর্তমানে নাফিউলের চিকিৎসার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারী ভাবে সহায়তা না পেলে ছেলে নাফিউলের উন্নত চিকিৎসা অব্যাহত রাখা তার পক্ষে আর সম্ভব হবে না। তাই ছেলের আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলহাজ্ব মো: শাহজাহান আলী বলেন সরকারী ভাবে নাফিউলকে সহযোগিতা করা খুবই জরুরি। শুকবর আলীর জমি-জমাও তেমন একটা নেই। যা ছিলো তা বন্ধক রেখে ছেলের চিকিৎসা করছে। সরকারী ভাবে সহযোগিতা করা না হলে মাঝ পথেই থেমে যাবে মেধাবী নাফিউলের চোখের চিকিৎসা।
এছাড়া আমার পক্ষ থেকেও নাফিউলকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাফিউলের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।