ভিডিও

ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ০৯:১২ রাত
আপডেট: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ০৯:১২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সমাজে ভুয়া চিকিৎসকদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। খবরে প্রকাশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মুনিয়া খান রেজা (২৫) নামে এক ভুয়া নারী গাইনি-চিকিৎসককে আটক করেছে আনসার সদস্যরা। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালের নতুন ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

তিনি স্বীকার করেন, ‘আমি কোন ডাক্তার না চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত নই। মুনিরা খান বলেন, তিনি মূলত ঢাকা মেডিকেল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া সবার অগোচরে ডাক্তারদের মূল্যবান মোবাইলসহ অন্যান্য সামগ্রী চুরি করে’।

রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে গলার টিউমার অপারেশন করার সময় এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া কিশোরীর নাম মোহনা খতুন (১৭)। সে বাঘা উপজেলার বাজুবাঘ ইউনিয়নের নটিকা গ্রামের মহিরুল ইসলামের মেয়ে। গলার টিউমার অপারেশন করার জন্য গত বুধবার সকালে সে ঐ ক্লিনিকে ভর্তি হয়।

মোহনার স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, সকালে ঐ ক্লিনিকে ভর্তির পর দুপুরে তার গলার টিউমারের অপারেশন করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে মোহনা মারা যায়। রামেক হাসপাতাল সূত্র বলছে, কিশোরী মোহনাকে রাত ১১টার দিকে নিয়ে আসা হয়। তার অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মারা যায়।

মোহনার মামা মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ভাগ্নির টিউমার অপারেশন করার জন্য আল-আমিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অপারেশন করা হয়। রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘ভুল চিকিৎসা হলে অবশ্যই সে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি দেখব। এ নিয়ে তদন্ত করা হবে।’

এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের পর এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে একজন ভুয়া চিকিৎসককে আটক করা হয়েছে। আটককৃত ভুয়া চিকিৎসক সামিউর রহমান (৩৭) নগরীর উপভ্রদা এলাকার রাশেদুর রহমানের ছেলে। আটকের পর তাকে স্থানীয় থানা পুলিশে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে এই ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে আনসার সদস্যরা। তথ্য মতে, সামিউর রহমানের শরীরের অ্যাপ্রোণ, কাঁধে ঝুলানো স্টেথোস্কোপ, গলায় রয়েছে আইডি কার্ড। তিনি নিজেকে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক দাবি করেন। আসলে তিনি কোন চিকিৎসক নন। ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে হাসপাতালে আসেন তিনি।

এ কথা কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, সমাজে ভুয়া চিকিৎসকদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা সমাজে প্রায়ই ঘটছে। মনে রাখতে হবে, প্রতারণা হচ্ছে অসদুপায় অবলম্বন করে বাঁকা পথে কোন কিছু অর্জনের চেষ্টা। বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা এমন যে, মানুষ খুব সহজেই একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। প্রতারণার মাত্রা এখন এতটাই প্রবল যে, এটা বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য।

এর ফলে মানুষ যেমন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে, একইভাবে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিনে দিনে বৈষম্য ও অস্থিরতা বাড়ছে। এদিকে সরকারি হাসপাতালের আশেপাশে হাজার হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যার ৯৫ ভাগ অবৈধ। যার অধিকাংশের মালিক রাজনৈতিক দলের নেতা।

এক শ্রেণির ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে ডিউটি না করে সেখানে কাজ করেন। সব মিলিয়ে সারাদেশের চিকিৎসা সেবায় চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। চিকিৎসা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। অন্যদিকে, ভুলচিকিৎসা ও ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ভুল চিকিৎসায় বা চিকিৎসা অবহেলায় প্রায়ই রোগীর মৃত্যুর খবর পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায়।

স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যা হচ্ছে পুরনো ধাচের অব্যবস্থাপনা সে কারণে কোন সংকট দেখা দিলে তাকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী কোন পরিকল্পনা হয় না। প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন যে সংস্কার দরকার তা হলো আমুল পরিবর্তন। যদি স্বাস্থ্য খাতের আমুল পরিবর্তন করা যায় তা হলে সবধরনের অনিয়ম-প্রতারণার দৌরাত্ম্য কমে আসবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS