আওয়ামী সমর্থক শিল্পীদের হোয়াটস অ্যাড গ্রুপ ‘আলো আসবেই’-এর কথপোকথন ফাঁস কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন ঢালিউড হিরো সাইমন সাদিক। আত্মপক্ষ সমর্থন করে গ্রুপটিতে তার যুক্ত হওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অভিনেতা। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে অবশ্য গ্রুপের কথপোকথন ফাঁসকারীর ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
আজ (৫ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্টে সাইমন সাদিক লিখেছেন, ‘যেকোন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে আপনি যতজনকে খুশি অ্যাড করতে পারেন। বিষয় হচ্ছে, আপনি সেই গ্রুপে কী লিখেছেন বা আপনি অ্যাকটিভ ছিলেন কি না। আপনারা মনে হয় দেখেছেন, আমাকে ওনারা অ্যাড রেখেছিলেন, কিন্তু আমার কোনো রিয়্যাকশন ছিল না। আমার ভুল হয়েছে, ওনারা আমাকে অ্যাড করার পর আমি কেন লিভ নিলাম না। আপনি বলুন তো, একই পেশার বড়রা যখন আপনাকে একটা গ্রুপে অ্যাড করতো, আপনি কী করতেন?’
ওই পোস্টে নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন সাইমন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে বারবার ফোন করা হচ্ছিলো, আমি যেন বিটিভিতে গিয়ে আন্দোলনে দাঁড়াই। আমি বারবার “না” করার পর বললো যে, “ঠিক আছে, তুমি আসতে পারবে না, সেটা অন্তত গ্রুপে লিখে দাও!” এটা যদি অনেক বড় অপরাধ হয়, আমি অপরাধী। সবাই সুন্দর থাকুন, স্বাদ নিন।’ কথপোকথন ফাঁসকারীর ওপর ক্ষুব্ধ সাইমন লিখেছেন, ‘যিনি “আলো আসবেই” গ্রুপ থেকে স্ক্রিনশট ফাঁস করেছেন, তিনি কেন লিভ নেননি। নিশ্চয়ই তখন সুবিধা নেওয়ার ধান্দায় ছিল!’
গত ৩ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী সমর্থক শিল্পীদের একটি গোপন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের কথপোকথন। ছাত্রদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুলি চলাকালে গত ১ আগস্ট ওই গ্রুপের একটি বড় অংশ হাজির হন বিটিভির ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে। গ্রুপটির স্ক্রিনশট জানান দিচ্ছে, সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত এই গোষ্ঠী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শিল্পীদের চিহ্নিত করতে কাজ করে যাচ্ছিল।
‘আলো আসবেই’ গ্রুপের কথপোকথনে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতিকে লিখতে দেখা গেছে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন। ফায়ার সার্ভিস ও গণমাধ্যমকর্মীদের ঢুকতে দিচ্ছে না টোকাই জামায়াত-শিবিরের মেধাবী আন্দোলনকারীরা।’ অরুণা বিশ্বাস উত্তরে লিখেছেন, ‘গরম জল দিলেই হবে।’ সুইটি লিখেছেন, ‘কোনোভাবেই পিছে হটা চলবে না। আমরা কখন কীভাবে কোথায় একত্রিত হবো, সেটা আমরা সবাই মিলে ঠিক করে বের হবো।’
আলোচিত-সমালোচিত ‘আলো আসবেই’ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছিলেন বিনোদন অঙ্গনের অভিনেতা ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ, নায়ক রিয়াজ, আজিজুল হাকিম, রওনক হাসান, মামুনুর রশিদ, সাজু খাদেম, ফজলুর রহমান বাবু, সাইমন সাদিক, জুয়েল মাহমুদ, জায়েদ খান, ঝুনা চৌধুরী, লিয়াকত আলী লাকি ও মো. শাহাদাত হোসেন। অভিনেত্রীদের মধ্যে ছিলেন অরুণা বিশ্বাস, সুবর্ণা মুস্তফা, শমী কায়সার, সুইটি, স্বাগতা, সোহানা সাবা, আশনা হাবীব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, শামীমা তুষ্টি, দীপান্বিতা মার্টিন, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, সঙ্গীতা মেখাল, সৈয়দা শাহানুর, উর্মিলা শ্রাবস্তী কর ও হৃদি হক। নির্মাতাদের মধ্যে ছিলেন গুলজার, বদরুল আনাম সৌদ, এস এ হক অলীক, রুনি, রুবেল শঙ্কর, রাজিবুল ইসলাম রাজিব ও মাসুদ পথিক। এছাড়া সরকারের সদ্য সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্যপ্রতিমন্ত্রী এম এ আরাফাত, ডিবি হারুন ছাড়াও অন্তত আড়াই শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে এই গ্রুপ। সরকারের কাছে বিরোধীদের ব্যাপারে বার্তা দেওয়া ও জনতার কাছে সরকারের ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছাতে নিয়োজিত ছিল গ্রুপটি। জানা গেছে, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় এ গ্রুপ।
আলো আসবেই গ্রুপের অন্যতম সদস্য সাইমন সাদিকের সর্বশেষ সিনেমা ‘মায়া: দ্য লাভ’ মুক্তি পায় চলতি বছর। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিশোরগঞ্জের ছেলে সাইমন সাদিক কিশোরগঞ্জ জেলা সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক। সংগঠনটির সভাপতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ ওরফে ডিবি হারুন। তার লেখা গল্পে ‘হাওড়ের মানিক’ নামে একটি সিনেমা বানাচ্ছিলেন সাইমন, যাতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন আলো আসবেই গ্রুপের আরেক সদস্য আশনা হাবিব ভাবনা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।