সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে এক ভিন্নধর্মী আয়োজনে বাড়ি ফেরার আনন্দ উদযাপন করেছেন জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস তারকা জিন।
সেটি হল সিউলের জামসিল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নির্বাচিত এক হাজার অনুরাগীকে আলিঙ্গন করছেন জিন। এছাড়া ভক্তদের ওই অনুষ্ঠানে গান গেয়েও শোনান ৩১ বছর বয়সী এই সংগীত শিল্পী।
সিএনএন লিখেছে, জিনের ফেরার এই ঘটনা রীতিমত উৎসবে রূপ নিয়েছে সিউলে। ওই অনুষ্ঠানে চার হাজার শ্রোতা উপস্থিত থাকলেও মঞ্চে উঠে জিনকে আলিঙ্গনের সুযোগ পেয়েছেন এক হাজার অনুরাগী। এক র্যাফেল ড্রর মাধ্যমে এই এক হাজার ভক্তকে বেছে নেয় কর্তৃপক্ষ।
সিউল শহরের উত্তরে ইয়নচেয়ন শহরের এক প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে বুধবার ছাড়পত্র পেয়েছেন জিন। এ সময় কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর পোশাকে দেখা গেছে তাকে। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের গেইট দিয়ে বেরিয়ে আসার পর বিটিএসের হিট গান ‘ডায়ানামাইট’ বাজিয়ে তাকে বরণ করে নেওয়া হয়।
জিন প্রশিক্ষণে যোগ দিয়েছিলেন ১৮ মাস আগে, দলের সদস্যের মধ্যে তিনিই বিটিএসের প্রথম সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করলেন।
জিন বলেন, " ব্যান্ডের সদস্য ও অনুরাগীদের ভালোবাসায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। ঘাঁটি থেকে বের হয়ে এসে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। সত্যি বলছি গত দেড় বছর দারুণ সময় কাটিয়েছি।"
বিটিএসের বাকি সদস্যদের মধ্যে আরএম, জে-হোপ, জিমিন, ভি ও জাংকুক এখনো প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারা জিনকে অভিবাদন জানিয়েছেন।
এছাড়া সুগা একজন সোশ্যাল সার্ভিস এজেন্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কেননা তিনি নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য যে শারীরিক যোগ্যতা, সেটি এখনো পূরণ করতে পারেননি।
কোরীয় তরুণদের এই প্রশিক্ষণ পর্বের প্রস্তুতি শুরু হয় সাধারণ ১৮ বছর বয়স থেকে। ২০ বছর বয়সের মধ্যে তাদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয় যে, আদৌ সেই তরুণ সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত কী না। পরীক্ষায় পাস করলে পরে সুবিধাজনক সময়ে টানা ১৮ মাসের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণে যেতে হয় তরুণদের।
তবে ২০২২ সালে আইন সংশোধন করে বিশেষ ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিল করে ৩০ বছর করা হয়। এই 'বিশেষ ক্ষেত্রের' মধ্যে পড়েছে বিটিএসের সদস্যরা।
বিটিএসের এজেন্সি বিগহিট মিউজিক জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জুনে সামরিক বাহিনী থেকে তাদের দায়িত্ব শেষ হবে।
জিনকে আলিঙ্গন করার সুযোগ পাওয়া থাইল্যান্ডের মিম চেনচানিয়া সিএনএনকে বলেন, " আমি যখন জানলাম জিনকে জড়িয়ে ধরতে র্যাফেল ড্রতে আমার নাম এসেছে, আনন্দে কেঁদে ফেলেছি। আমি জিনকে থাইল্যান্ডে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বলেছি, আমরা বিটিএসকে অনেক ভালোবাসি, বিটিএস যেন থাইল্যান্ডে সাতদিনের কনসার্ট করে। "
সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বেগুনি রঙা মঞ্চে দাঁড়িয়ে একের পর ভক্তকে আলিঙ্গন করছেন জিম। সেখান থেকে হর্ষধ্বনি আর কান্নার আওয়াজ ভেসে উঠছে। আর মঞ্চে উঠতে ভক্তকূল সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
হোলি ক্যাম্পবেল নামের অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে আসা এক বিটিএস ভক্ত বলেন, " আমি যে কোনো মূল্যে এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে চেয়েছিলাম। জিনকে আলিঙ্গন করতে আমি আর আমার বন্ধু র্যাফেল ড্রতে অংশ নিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য যে নাম ওঠেনি লটারিতে।"
স্টডনউর নামের মেলবোর্নের আরেক ভক্ত বলেন, " বিটিএস মানেই ভালোবাসা। তাদের গানে, পোশাকে, চলাফেরায়, ব্যক্তিত্বে ভক্তদের জন্য তারা ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়।"
এই কে-পপ ব্যান্ডের আরেক ভক্ত কিম ইউন-জিয়ং জানান, তিনি জিনকে আলিঙ্গনের সুযোগ না পেয়ে সারারাত কেঁদেছেন।
কথা বলতে বলতে তিনি সিএনএনকে তার হাতে আঁকা বিটিএস এর প্রত্যেক সদস্যের ছবি দেখান।
ক্যালিফোর্নিয়ার মিশেল পেড্রাজা বলেন, " আমি র্যাফেলে জিতিনি, তাই আলিঙ্গনের সুযোগ মেলেনি। কেবল চোখের দেখা দেখব। তবে ভালোই হয়েছে আলিঙ্গনের সুযোগ পাইনি। এমন হলে হয়ত, মঞ্চে উঠে আমি শুধু চিৎকার করে কেঁদেই যেতাম।"
বিটিএসকে ভালোবেসে এই নারী তার চুল বেগুনী রঙ করেছেন।
অনুষ্ঠানে ভক্তদের অনেকে বেগুনী পোশাকে উপস্থিত হয়েছিলেন। ব্যান্ডটির থিম রঙ বেগুনী হওয়ায় ভক্তরা সেই রঙটিকে বেছে নিয়েছেন। মাথার চুল ছাড়াও, বেগুনী রঙে হাতব্যাগ ছিল কারো হাতে। এবং বেগুনী রঙয়ের মোবাইলের কাভারও দেখা গেছে কারো কারো।
২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বিটিএস। সে সময় তাদের ডাকা হত 'পুচকে' নামে।
সে সময় বিটিএসের বেশির ভাগ গান কোরিয়ান ভাষায়, শুরুর দিকে বিটিএসের গানে কোনো সাবটাইটেল থাকত না। পরে ইংরেজিতেও গান শুরু করে তারা। এবং জনপ্রিয়তায় দক্ষিণ কোরিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
নিজেদের দেশ কোরিয়ায় ব্যাপক সাফল্যের পর ব্যান্ডটি প্রথমে দৃষ্টি দেয় সংগীতের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রেও। ২০১৭ সালে প্রথম কে-পপ ব্যান্ড হিসেবে পারফর্ম করে আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে।
'ম্যাপ অব দ্য সোল: পারসোনা' অ্যালবাম দিয়ে বিটিএস প্রথম কোরীয় ব্যান্ড হিসেবে ২০১৯ সালে ইউকে টপ চার্টের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। এরপর লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে দুটি শো করে। এরপর প্রথমবার বিরতিতে যায় দলটি। অবশ্য কয়েক সপ্তাহ পরই নতুন ট্যুর নিয়ে ফিরে আসে আরএম, জিনরা।
২০২০ সালে বিটিএস এর সাফল্যের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। ওই বছর তাদের তুমুল জনপ্রিয় গান ‘ডিনামাইট’ এর জন্য প্রথম কোরীয় ব্যান্ড হিসেবে বিলবোর্ড হট ১০০ টপ চার্টের শীর্ষে উঠে আসে বিটিএস। একই বছর লেডি গাগা, আরিয়ানা গ্রান্ডে, টেলর সুইফটের মত তারকাদের হারিয়ে এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে বেস্ট পপ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার পায় দলটি।
এছাড়া ‘বাটার’ ও ‘পারমিশন টু ড্যান্স’ গানের জন্য টানা যুক্তরাষ্ট্রের সিঙ্গেল চার্টের শীর্ষে ওঠে বিটিএস। একই বছর প্রথম কোরীয় ব্যান্ড হিসেব গ্র্যামি মনোনয়ন পায় বিটিএস।
প্রথম এশীয় ব্যান্ড হিসেবে বিটিএস আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসে আর্টিস্ট অব দ্য ইয়ার স্বীকৃতি পায় ২০২১ সালে।
ওই বছর গান থেকে দ্বিতীয়বারের মত বিরতি নেয় ব্যান্ডটি। তবে ফিরেও আসে আগেরবারের মত দ্রুত।
২০২২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করতে হোয়াইট হাউস সফরে যায় দলটি। যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়বিরোধী হেট ক্রাইম থামাতে পদক্ষেপ নিতেই তাদের এ সফর হয়েছিল। এরপর ১৪ জুন এক ভিডিও বার্তায় একক ক্যারিয়ারে মনোযোগী হওয়ার কথা জানায় বিটিএস। এরপর ধাপে ধাপে ব্যান্ডের সদস্যদের একক অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।