দুইবার গোল্ডেন গ্লোব জয়ী কানাডিয়ান অভিনেতা ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।
ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের ছেলে অভিনেতা কিফার সাদারল্যান্ড বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি, আমার বাবা ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড মারা গেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতাদের একজন মনে করি। ভালো, মন্দ কিংবা কুৎসিত কোনো চরিত্রই তাঁকে দমাতে পারেনি। তিনি নিজের কাজকে ভালোবাসতেন এবং যা ভালোবাসতেন সেসবই করতেন। এর চেয়ে মানুষ বেশি আর কীইবা চাইতে পারে। জীবনটা ভালোভাবেই কাটিয়ে গেছেন তিনি।’
ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের স্মৃতিকথা ‘মেড আপ, বাট স্টিল ট্রু’ আগামী নভেম্বরে বাজারে আসার কথা রয়েছে। অভিনেতা হিসেবে তাঁর পথচলার ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে এতে। বই প্রকাশের আগেই পরপারে চলে গেলেন তিনি। তাঁর চার ছেলে ও এক মেয়ে।
ডোনাল্ড সাদারল্যান্ডের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। নোভা স্কটিয়া প্রদেশের ওয়েস্টভিল শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিফার ও পুরো সাদারল্যান্ড পরিবারের প্রতি আমি সমব্যথী। নিঃসন্দেহে মৃত্যুর খবর জানতে পেরে সমস্ত কানাডিয়ান মর্মাহত হয়েছেন, যেমনটা আমি হয়েছি। তিনি শক্তিমান একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর অভিনয় নৈপুণ্যে অন্যরকম উজ্জ্বলতা ছিলো। সত্যিকার অর্থেই তিনি কানাডার একজন মহান শিল্পী ছিলেন।’
১৯৯১ সালে ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড অভিনীত অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাকড্রাফট’ পরিচালনা করেন রন হাওয়ার্ড। তিনি এক্সে (টুইটার) শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে লিখেছেন, ‘সর্বকালের সবচেয়ে মেধাবী, আকর্ষণীয় ও দর্শকপ্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। সর্বোচ্চ মান নিয়ে গল্প উপস্থাপন ও দর্শকদের কাছে পরিবেশনে তাঁর অবিশ্বাস্য পরিসর, সৃজনশীলতার মনোবল ও আন্তরিকতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
১৯৩৫ সালের ১৭ জুলাই কানাডায় জন্মগ্রহণ করেন ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড। রেডিওর নিউজ রিপোর্টার হিসেবে চাকরি শুরু হয়েছিলো তার। ১৯৫৭ সালে কানাডা ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। লন্ডন অ্যাকাডেমি অব মিউজিক অ্যান্ড ড্রামাটিক আর্টে পড়াশোনা করেন।
লন্ডনে মঞ্চনাটকে অভিনয় করে সপ্তাহে মাত্র ৮ পাউন্ড পেতেন ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড। ১৯৬৪ সালে রয়েল কোর্ট মঞ্চে একটি নাটকে অভিনয় করে সপ্তাহে ১৭ পাউন্ড পেয়েছিলেন তিনি। এরপর ব্রিটিশ সিনেমা ও টেলিভিশন সিরিজে স্বল্প উপস্থিতির কিছু চরিত্রে অভিনয় করে অভিজ্ঞতা জমিয়েছেন এই তারকা।
প্রায় ২০০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য– দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘দ্য ডার্টি ডজন’ (১৯৬৭), কোরিয়ান যুদ্ধে কর্মরত চিকিৎসকদের নিয়ে নির্মিত কমেডি ‘ম্যাশ’ (১৯৭০), “কেলি’স হিরোস” (১৯৭০), “ডোন্ট লুক নাউ” (১৯৭৩), ‘দ্য ঈগল হ্যাজ ল্যান্ডেড’ (১৯৭৬), “ন্যাশনাল ল্যামপুন’স অ্যানিমেল হাউস” (১৯৭৮), ‘ইনভেশন অব দ্য বডি স্ন্যাচার্স’ (১৯৭৮)। ‘দ্য হাঙ্গার গেমস’ ফ্রাঞ্চাইজের প্রথম চারটি ছবিতে অত্যাচারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
‘ক্লুট’ (১৯৭১) ছবিতে গোয়েন্দা চরিত্রে দর্শকদের মন কাড়েন ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড। এতে তার সহশিল্পী জেন ফন্ডা অস্কারে সেরা অভিনেত্রী হন। ব্যক্তিজীবনে তারা দুই বছর প্রেমের জড়িয়েছিলেন। দু’জনে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে আলোচিত হন।
আশির দশকে ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড অভিনীত ‘অর্ডিনারি পিপল’ চারটি করে অস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব জিতেছে। ক্যারিয়ারে কখনো অস্কারের মনোনয়ন জোটেনি তার কপালে। তবে ২০১৭ সালে সম্মানসূচক অস্কার দেওয়া হয় গুণী এই অভিনেতাকে।
ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড ২০০০ সালের পর ছোট পর্দায় নাম লেখান। তার জনপ্রিয় সিরিজের তালিকায় আছে ‘ডার্টি সেক্সি মানি’, ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’ প্রভৃতি।
গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসে ৯ বার মনোনীত হন ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড। এরমধ্যে ১৯৯৫ ও ২০০২ সালে টেলিভিশনের সেরা সহ-অভিনেতা বিভাগে পুরস্কার জেতেন তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।