ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর ধানমন্ডি-৩২-নম্বরের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে আগুনে ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। কাল বৃহস্পতিবার পুড়ে যাওয়া ওই বাড়িতে কেউ না গেলেও একাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবেন অভিনেত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপকমিটির সদস্য রোকেয়া প্রাচী। সত্যিই কি তিনি একাই যাচ্ছেন সেখানে?
শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বিনোদন অঙ্গনের আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেককেই নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু রোকেয়া প্রাচী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব। গতকাল সোমবার তিনি ঘোষণা দেন, ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে উপস্থিত হবেন তিনি।
ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা জেগে উঠবো এই ধ্বংস থেকে। জেগে উঠবো আগুনে পোড়া ৩২ এর এই ঘর থেকে। জেগে উঠবো নিভে যাওয়া ছাই থেকে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভেবেছ সব সাহস পুড়েছে? পুড়েছ তোমরা! আমরা বাঙালি এই ছাইভস্ম থেকেই উঠবো আবার আগুন হয়ে জেগে! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
এত বড় দলের নেত্রী হয়ে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে কি তিনি একাই যাবেন? এ প্রসঙ্গে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ডাক না দিলে ১৯৭১ হতো না, আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। আমরা অকৃতজ্ঞ না, আমরা বাংলাদেশকে ভালোবাসি, আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। আমি যাব, আমরা যাব, আমরা সবাই যাব ধানমন্ডি বত্রিশে। পোড়া বাড়িতে গিয়ে আমরা শ্রদ্ধা জানাবো। যদি কেউ না যায়, ঠিক করেছি আমি একাই যাব শ্রদ্ধা জানাতে।’
এর আগে গত রোববার রাতে শান্তিপূর্ণভাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতার চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্য দোয়াও চেয়েছেন তিনি।
রোকেয়া প্রাচী বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ। তার প্রথম স্বামী প্রয়াত সার্জেন্ট আহাদ পারভেজও ছিলেন নাট্যকর্মী। ১৯৯৯ সালের ২৮ অক্টোবর এই তরুণ পুলিশ কর্মকর্তাকে গুলিস্থান পুলিশ বক্সের সামনে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুলকে বিয়ে করেন তিনি। ২০১৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রোকেয়া প্রাচী। দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ফেনী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘জয় পরাজয়’ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে টিভিনাটকে অভিষেক হয় রোকেয়া প্রাচীর। ১৯৯৭ সালে ‘দুখাই’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয়।
অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি টিভি নাটক, কাহিনীচিত্র ও টেলিছবি নির্মাণ করেছেন প্রাচী। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘স্বপ্ন সত্যি হতে পারে’, ‘রুবিনা’, ‘আমেনা’ ও ‘ফুলকির গল্প’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাহিনিচিত্র ‘কবি ও কবিতা’ পরিচালনা করেছেন তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।