ভিডিও

নীলফামারীর সুমিত্রা, কনিকাদের দিন বদলের গল্প

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৩:৪১ দুপুর
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪, ০৭:১৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

নিজের আলোয় ডেস্ক ঃ  উত্তরের নীলফামারীর গ্রামীণ নারীরা কুটির শিল্প, গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠা পরচুল তৈরীর কারখানা, বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ, সেলাই প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। গ্রামীণ নারীরা সংসারের যাবতীয় কাজ স¤পন্ন করার পরও বাড়তি আয় উপার্জনে আর্থিক সচ্ছলতায় আনছে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করছে।

গ্রামীণ অর্থনীতির উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বাঁশ ও বেতের কাজ। গ্রামীণ মহিলারা বেতের সাহায্যে পাঁটি, জায়নামাজ, ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। বাঁশের সাহায্যে মুরগির খোপরি, ঘরের বেড়া ইত্যাদি তৈরি করে, যা স্থানীয় বাজারে ও পাড়া প্রতিবেশির কাছে বিক্রি করে আর্থিক প্রয়োজন মেটাই। গ্রামীণ নারীরা ছোটা আকারে পোল্ট্রি শিল্পের কাজ করছে।

দেশি ও বিদেশি জাতের স্বল্প সংখ্যক হাঁস মুরগি লালন-পালন করে তারা। বিভিন্ন মুরগি ও মুরগির ডিম বিক্রি করে তারা টাকা আয় করছে। গ্রামের অনেক নারী শাক-সবজির পাশাপাশি মৎস্য চাষ করে। মৎস্য চাষ ছোট হলেও অনেক সাফল্য ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। গবাদিপশু পালন গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী একটি কাজ। গ্রামের এমন কোন বাড়ি নেই, যাদের দুই- চারটি গরু ছাগল থাকে না।

গরু দিয়ে চাষাবাদের পাশাপাশি দুধ ও গরুর বাছুর বিক্রির মাধ্যমে সংসারের প্রায়োজনীয় চাহিদা পুরন করে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতীয় ছাগল পালন অত্যন্ত লাভ জনক বলে বিবেচিত। কারণ এ জাতীয় ছাগল বছরে একাধিক বাচ্চা দেয়। যার ফলে নারীরা পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে।

উত্তরের নীলফামারী ছিল এক সময় অভাব অনটনের জেলা। ভাগ্য পরিবর্তনে আজ গ্রামীণ নারীদের হাতের বিভিন্ন কারুকার্য দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা জাগাতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামীণ বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে নারীদের এই অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লে¬খযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা, হয়েছেন স্বাবলম্বী, মুখে ফুটেছে হাসি।

নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের পারঘাট আলোর বাজারে গড়ে ওঠা স্বপ্ন চূড়া হস্ত কুটির শিল্প। এখানে অসংখ্য গ্রামীন নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। এখানে নারীরা সংসারে কাজ শেষে নিজবাড়িতে বসেই তাদের নিপুন হাতে ২০ ধরনের নানান আকৃতির পণ্য তৈরি করছেন। তারা পাট দিয়ে তৈরি করছেন ম্যাট, ওয়াল ম্যাট, রাউন্ড ম্যাট, ব্যাগ এবং হোগলা পাতা দিয়ে ফুলদানী, টব, বাস্কেটসহ নানান রকমের পণ্য। এসব পণ্যের প্রতিটি বাজার মূল্য প্রায় ৩০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি সপ্তাহে নারীরা তাদের তৈরীকৃত এসব পণ্য স্বপ্নচুড়ায় এনে সরবরাহ করেন। এতে তাদের মাসিক আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এ সব পণ্য তৈরির কাচাঁমালের যোগান আর্টিশান ও বিডিকেশন কো¤পানী দিয়ে থাকে। আর এসব পণ্য জার্মানী, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স, মরোক্ক,হংকংসহ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। একটা সময় যে গ্রামীণ নারীদের সময় কাটত অলসভাবে তারাই এখন স্বপ্ন দেখছেন আকাশ ছোঁয়া।

জেলা সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সুমিত্রা রানী, কনিকা রানী , ফুলো বালা , বলেন- এখান থেকে আয় করে তাদের সংসারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখন আর আগের মত সংসারে অভাব মনে হয় না তাদের। অনেক ভালো আছেন তারা। এখানকার এসব পণ্যগুলো মানসম্মত ও পরিবেশ সামঞ্জস্বপুর্ণ হওয়ায় বিদেশে প্রচুর চাহিদা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, আমেরিকা, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

স্বপ্নচুড়ার উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী শঙ্কর চন্দ্র রায় জানান, কারিগরদের কাছে পণ্যের কাঁচামাল আমরা সরবরাহ করি এবং আমরাই সঠিক দামে তৈরি পণ্যগুলো ক্রয় করে বিদেশী বায়ারের কাছে বিক্রয় করে থাকি। এই কাজের মাধ্যমে এলাকার গ্রামীণ পরিবার গুলো হচ্ছে উপকৃত অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী। শঙ্কর রায় আরো বলেন, আমরা কয়েক বন্ধু মিলে চার লাখ টাকা মুলধন নিয়ে এই কুটির শিল্পের ব্যবসা শুরু করি। দুই বছরে আমদের মোট মুলধন ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এখন পাঁচ হাজার নারীর নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য কাজ করছি।

নীলফামারী জেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পকারখানা। ঘুরলেই চোখে পড়ে নারীদের ক্ষুদ্র নানা কাজে অংশগ্রহণের চিত্র। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের ফলে অর্থনীতির চাকা মজবুত হচ্ছে এই অঞ্চলের। ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন নারীরা। নারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, তারা কর্মক্ষেত্র তৈরি করছেন। এর ফলে নারীরা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছেন তেমনি সংসারে সক্ষমতা বাড়ছে।

নীলফামারীতে গ্রামে গ্রামে কুটির শিল্প ও পরচুলা তৈরির ফ্যাক্টরি হওয়ায় এলাকায় একটা পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ২৫ হাজার নারী বিভিন্ন কারখানায় কাজ করছে। এখানে কাজ করে অনেক নারী সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।

নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ততা বেড়েছে। যারা কাজ করেন তারা সবাই নারী। তাদের সংসারে উন্নতির পরিবর্তন এসেছে। গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিকাশে বিসিক নানাভাবে পাশে রয়েছে এবং সহযোগিতা করছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS