ভিডিও

ঐশী পাইপার গ্লোবাল স্কলারশিপ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নারী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪, ০৬:৩৮ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪, ১২:২৩ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নিজের আলোয় ডেস্ক ঃ সাবিহা মেহজাবিন ঐশী। জন্ম ঢাকায়। বাবা সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ। বাবার চাকরির সুবাদে শৈশব-কৈশোর কেটেছে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে। সেনানিবাসের কঠোর-নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে বেড়ে ওঠা তার। স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণায় নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন ঐশী যুক্তরাজ্য থেকে সম্মানজনক ডিএলএ পাইপার গ্লোবাল স্কলারশিপ লাভ করেন। তিনি গ্লোবাল স্কলারশিপ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নারী।

ঐশী বর্তমানে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে আইনের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সমাজের অসহায় মানুষের পাশের দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে ‘গোপ্রোবোনো’ নামে একটি অনলাইন অ্যাপস তৈরি করছেন তিনি। বিনামূল্যের এই অ্যাপসের মাধ্যমে যে কেউ আইনি সহায়তা চাইতে পারবেন। 

১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় জন্ম। আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় ঢাকায় কেটেছে। সেনানিবাসের পরিবেশে বড় হয়েছি। বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ (এনডিসি, পিএসসি)। এখন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমার মা সৈয়দা নুরুন নাহার একজন কৃষিবিদ। আমার আরেক এক বোন রয়েছেন। বাবার মতো সেও একজন সেনা অফিসার।

আমার পিতামহ বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছিলেন এবং আমার দাদি স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। আমার দাদা একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আমার নানি ছিলেন একজন গৃহিণী।

ছোটবেলার দিনগুলো ঃ বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হয়েছে। দেখেছি অপরূপ উত্তরবঙ্গ, তেমনি পূর্বের সবুজ-শ্যামল বাংলার প্রকৃতি প্রত্যক্ষ করেছি। দক্ষিণ-পশ্চিম জুড়ে ভ্রমণ করেছি। আমি বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। বেশিরভাগ সময় ক্যান্টনমেন্টে বসবাস করেছি। শৈশব থেকে এ পর্যন্ত পুরো জীবন-বেড়ে ওঠা আমার পরিবার এবং বন্ধুদের ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।


কেন এবং কার অনুপ্রেরণায় আইন পড়লেন ঃ জ্ঞান হওয়ার পর থেকে নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বাংলাদেশে বৈষম্য এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অসুবিধাগুলো উপলব্ধি করেছি। ছোটবেলা থেকে আমি নিজেও মানুষকে ন্যায় বিচার পাইতে দিতে ভূমিকা রাখতে চেয়েছি। আমার বাবা-মা আইন পড়তে আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তারা অনুপ্রাণিত করেছেন ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে, সঠিক পথে চলতে। বাবা-মায়ের কারণে আজ আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।


ডিএলএ পাইপার গ্লোবাল স্কলারশিপ সারা বিশ্বের আইন শিক্ষার্থীদের দেওয়া সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৃত্তিগুলোর মধ্যে একটি। আইনের ক্ষেত্রে একটি অসামান্য ফলাফল থাকতে হবে। তাদের পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপে জড়িত থাকতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকতে হবে।

এই বৃত্তি পেতে আবেদন করার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থী ও নেতৃত্বের গুণাবলি থাকতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগ দ্বারা মনোনীত এবং অনলাইনে আবেদন পূরণ করতে হবে এবং কাজের সমস্ত প্রমাণ থাকবে। এর পরে, যদি তাদের সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়, তখন ডিএলএ পাইপারের একজন আইনজীবী/অংশীদারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্য বসতে হবে। একটি জোরালো স্ক্রিনিংয়ের পর বৃত্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত খরচ, যাতায়াত ও বাসস্থানের খরচ ইত্যাদির জন্য দেওয়া হয় এই বৃত্তি।

ডিএলএ পাইপার গ্লোবাল স্কলারশিপ পাওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষে থাকা অবস্থায় মর্যাদাপূর্ণ ডিএলএ পাইপার গ্লোবাল স্কলারশিপ পেয়েছি। এই স্কলারশিপ প্রাপ্ত ২ জনের মধ্যে আমিই প্রথম বাংলাদেশি নারী, যে এই বৃত্তি পেয়েছি। এটি শুধুমাত্র বিশ্বের শীর্ষ ৫ শতাংশ আইন শিক্ষার্থীদের উচ্চতর সিজিপিএ, ইসিএ এবং নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য দেওয়া হয়েছিল। সারা বিশ্বের অনেক প্রতিভাবান আইন ছাত্রের মধ্যে এই সম্মানজনক বৃত্তি প্রাপ্তদের একজন হতে পেরেছি। এই বৃত্তির মাধ্যমে এলএলবি এবং এলএলএম এর জন্য অর্থ পেয়েছি।

এর ফলে রোম ও লন্ডনে আমার আইনি প্রশিক্ষণ শেষ করেছি। বিভিন্ন আইনি এবং লিডারশিপ কোর্সে অংশ নিতে সক্ষম হয়েছি। এই বৃত্তি আমার জীবন বদলে দিয়েছে।

যারা আইন পড়তে চায় তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে ঐশী বলেন, যারা আইন অধ্যয়ন করতে চান তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, তারা যেন প্রথম থেকেই তাদের পড়াশোনাকে গুরুত্ব সহকারে নেয় এবং প্রতিদিন শেখার জন্য উৎসাহী হয়। এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, আইন মুখস্থ করাই সবকিছু নয়, বিষয়টির আইনি বিচার ও প্রয়োগ বুঝতে হবে। শিক্ষার্থীদের উচিত বেশি বেশি আইনি সম্মেলন, সেমিনারে নিজেদের সম্পৃক্ত করা।


নারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নারীরা আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড। সংসার দেখাশোনা থেকে শুরু করে দেশ পরিচালনায় নারীরা তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। আমাদের দেশের নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য তাদের স্বাধীন হতে দিতে হবে। 

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS