ভিডিও

দুপচাঁচিয়া ইউএনও এসি-ল্যান্ডসহ শীর্ষ ১২টি পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারী কর্মকর্তা

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৪, ০৪:৪৫ দুপুর
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৪, ১১:৫০ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

মো: গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) : দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ১৭টি সরকারি দপ্তর সহ উপজেলার সরকারি মোট ২৫টি দপ্তরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১২টিতে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন ১২জন নারী কর্মকর্তা। উপজেলায় সমানতালে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের পদচারণা। রীতিমতো পুরুষদের পিছনে ফেলেই নারীদের এই এগিয়ে চলা। 

তাদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জান্নাত আরা তিথি ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর উপজেলায় যোগদান করেন। এরপর থেকে সাহসিকতার সাথে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ঝিনাইদহ জেলার মেয়ে জান্নাত আরা তিথি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে প্রথমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন। এর মাঝেই ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রশাসনিক ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসাবে পিরোজপুরে সরকারি চাকরি জীবন শুরু করেন।

বিভিন্ন জেলা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করে সর্বশেষ জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন শেষে দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও  বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বাজার মনিটরিং-এ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছেন। 
একইভাবে ময়মনসিংহ জেলার মেয়ে লিজা আক্তার বিথী উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে গেল বছরের ১২ অক্টোবর উপজেলায় যোগদান করে ভূমি অফিসকে দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে উপজেলা নাগর নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা আদায় করে সেই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন। লিজা আক্তার বিথী জানান, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং নন-ক্যাডারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসাবে চাকরি জীবন শুরু করেন।

এর মাঝেই আবারও ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রশাসনিক ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসাবে ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করে ক্যাডারভিত্তিক চাকরি জীবন শুরু করেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালন শেষে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে যোগদান করেন। স্বচ্ছ ও জনবান্ধব ভূমি সেবা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি উপজেলা ভূমি অফিসকে শতভাগ ই-নামজারি বাস্তবায়নসহ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ই-সেবা চিত্র পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। 

স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ডাক্তার শামছুন্নাহার। ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শৃঙ্খলা ফিরে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। গত দু’বছরের অধিক সময় ধরে সফলতার সাথেই উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন।

খাদ্য বিভাগে মোছা: রেবেকা সিদ্দিকা প্রথম বারের মতো নারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসাবে ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর এই উপজেলায় যোগদান করেন। তিনি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে শতভাগ সফলতার লক্ষ্যে সেই সাথে সরকারের গৃহীত খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি টিআর, কাবিখা, ওএমএস এর চাল যথাসময়ে সরবরাহের কাজ সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করে আসছেন। এছাড়াও সরকারি নির্বাহী আদেশে চাল সরবরাহের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ কর্মকর্তার মতই সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে নারী ক্ষমতায়নের পাশাপাশি মাত্রিকালীন ভাতা প্রদান বাল্য-বিবাহ, নারী নির্যাতন, মানব পাচার সহ নিবন্ধনকৃত নারী সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বি করতে ভূমিকা রাখছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা ইয়াসমিন। তিনি ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর উপজেলায় যোগদানের পর থেকে সর্বক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। 
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রোকেয়া সুলতানা ২০১৯ সালের ৪ জুলাই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে ৩২টি ক্যাটাগরির বিভিন্ন সমিতির রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ওইসব সমিতির সদস্যদেক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করে তাদের স্বাবলম্বি করতে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

উপজেলা তথ্য অফিসার হিসাবে রুহানী আকতার ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল উপজেলায় যোগদানের পর থেকে মহিলাদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান সহ অসহায় মেয়েদের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির আবেদনে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নারীদের কল্যাণে কাজ করার পাশাপাশি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচিকে বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন।কৃষকদের কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে উপজেলার কৃষিক্ষেত্রে ‘কৃষিবিপ্লব’ ঘটিয়ে যে দু’জন নারী মাঠ থেকে মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা হলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা যারীন তাসনিম নিলয় ও অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মোছা: সালমা আকতার। তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে বিভিন্ন সময় ফসলের জমিতে সার বীজ প্রয়োগের বিষয়ে পরামর্শ সহ ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাজ তদারকি করছেন। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ফসল প্রদর্শন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। 
হোটেল রেস্টুরেন্টে ভেজাল ও নিম্ন মানের খাদ্য সরবরাহ বন্ধসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ভূমিকা রাখছেন উপজেলা সেনিটারী ইন্সপেক্টর মমতা রানী সাহা। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্ট ও দুধের বাজার পরিদর্শন করার পাশাপাশি প্রয়োজনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে এইসব ভেজাল নিম্নমানের খাদ্য বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকেন।

যোগাযোগ রক্ষার একটি বড় মাধ্যম পোস্ট অফিস। উপজেলা পোস্ট মাস্টার সামসুন নাহার ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি যোগদানের পর থেকে অফিসের চিঠি পত্র, পার্সেল, বীমা খাতাপত্র, বই ভিপি বিতরণ কাজের পাশাপাশি ডাক জীবন বীমা, সঞ্চয় ব্যাংক ও সঞ্চয় পত্র বিতরণে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছেন। যোগাযোগের উন্নতম মাধ্যম রেলওয়ে। বর্তমান সরকার রেলওয়ে আধুনিকায়ন উন্নয়ন ও যোগাযোগের বিপ্লব ঘটিয়েছে। সরকারের এই রেলওয়ে উন্নয়নে রেল যাত্রীসেবা দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে গতিশীল ভূমিকা রাখছেন উপজেলা তালোড়া রেল স্টেশন মাস্টার মোছা: মারুফা শারমিন। ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট নারী হিসাবে চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব নিয়ে তালোড়া রেলস্টেশন মাস্টার পদে যোগদান করে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। রেল স্টেশন মাস্টার হিসাবে তিনি বলেন, ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে নারীরা এখন অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন।    



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS