ভিডিও

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম পাতিলাপুরের নারীদের হাতের তৈরি টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৪, ০৪:৩৭ দুপুর
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪, ১১:৪৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

এম.আর মিন্টু/সাজাদুল ইসলাম, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) থেকে ঃ কুড়িগ্রামের পাতিলাপুরের টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বাহারাইন, সৌদি আরব ও দুবাইয়ে। টুপি তৈরি করে হাজারো নারীর হয়েছে কর্মসংস্থান। সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। তবে এমন আয় আর সুনামের গল্পের পিছনে মূল নারী উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগম।

বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় নারীদের আইকন হিসেবে পরিচিত তিনি। করেছেন নিপুণ হস্তশিল্প সম্ভার নামে টুপি তৈরির প্রতিষ্ঠান। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার পাতিলাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোর্শেদা বেগম । প্রায় দেড় যুগ ধরে প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি টুপি মধ্য প্রাচ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বাহারি রঙের সুতা আর রেশমার উপরে আঁকা বিভিন্ন নকশাকৃত বানানো টুপির চাহিদাও বেড়েই চলছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম বিসিক এর উপ-ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, পাতিলাপুর গ্রামের নারী উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগমের টুপি মধ্য প্রাচ্যে যাচ্ছে। এটি কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ভালো খবর। হাজার হাজার নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন তিনি। সরকারি কোন প্রশিক্ষণ, আর্থিক ঋণ অথবা টুপি বাজারজাতকরণে কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

জানা গেছে, বিয়ের পর মোর্শেদা বেগমের সংসারে অভাব থাকায় ১৯৯৫ সালে স্বামী জাবেদ আলীর সঙ্গে চলে যান টাঙ্গাইলে। সেখানে কাজ করতেন একটি তোয়ালে ফ্যাক্টরিতে। পরিচয় হয় প্রতিবেশি কমলা বেগমের সাথে। কমলা বেগম করতেন টুপি তৈরির কাজ। দিনে ফ্যাক্টরির কাজ করে রাতে টুপি বানানো শুরু করে মোর্শেদা। প্রথম টুপি তৈরি করে মজুরি পান ৩৫০ টাকা। পরে তার নিখুঁত কাজ দেখে মুগ্ধ হন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা।

প্রথম অর্ডারে ৫০টি টুপি তৈরি করে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার টাকা। এরপর ২০০৪সালে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন মোর্শেদা। প্রথমে ৭ জন নারীকে নিয়ে শুরু করেন টুপি তৈরীর কাজ। ২০০৮সাল থেকে তার হাতে বানানো টুপি মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হচ্ছে। টুপি তৈরি করে এখন স্বাবলম্বী মোর্শেদা। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন প্রায় ৫ হাজার নারী। মোর্শেদা বেগম নিজ গ্রাম পাতিলাপুরের নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি প্রায় ৪০ টি গ্রামের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন তিনি। 

মোর্শেদা বেগম আরোও জানান, ফেনীর দুজন ব্যবসায়ীর কাছে তিনি টুপি বিক্রি করেন। আর এই টুপি মধ্যপ্রাচ্যের বাহারাইন, সৌদি আরব ও দুবাইয়ে বিক্রি হয়। ওই ব্যবসায়ীরা তার কাছে রেশম সরবরাহ করেন। এরপর তিনি নারীদের সঙ্গে নিয়ে স্রেফ সুঁই সুতা দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের নকশাখচিত টুপি। দেখভাল করতে রয়েছে বেতনভুক্ত প্রায় ১৫ জন সুপারভাইজার। প্রকারভেদে প্রতিটি টুপি তৈরির জন্য নারীরা পারিশ্রমিক পান ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এসব টুপি তৈরি করতে সুই সুতার খরচ দেড়শ টাকা। মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ ধরনের এসব টুপি বিক্রি হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। প্রতি টুপিতে তিনি কমিশন পান ৮০ থেকে১০০ টাকা। প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টুপি বিক্রি করেন তিনি। 

সাত দরগাহ গ্রামের মৌসুমি বলেন, সারা বছর আমরা টুপি তৈরির কাজ করি। বিশেষ করে রমজান মাস ও কোরবানি ঈদের সময় টুপির চাহিদা বেশি থাকে। এসময় টুপি বানিয়ে জন প্রতি ৮থেকে১০হাজার টাকা পাই। 

পাতিলাপুর গ্রামের মর্জিনা বেগম জানান, মোর্শেদা বেগমের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে টুপি তৈরির কাজ শুরু করি। এখন তার আর অভাব নেই। সংসারের স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরি করে ভালো আয় করছেন তিনি। 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS