ভিডিও

বানভাসিদের জন্য

আহাদ আলী মোল্লা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪, ০৫:২৭ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪, ০৫:২৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

জেরিনের মন খারাপ। দু’দিন ধরে সে বই পড়ছে না। ছুঁয়েও দেখছেনা খেলনা। খাওয়া দাওয়ায় বড্ড অনীহা। সকালে-বিকেলে টেলিভিশনে সে কার্টুন দেখে। কিন্তু এ কদিন কার্টুনের চ্যানেলগুলোয় চোখ নেই তার। বড়দের মত খবর দেখছে সে। আব্বু-আম্মু তো অবাক। কী ব্যাপার! বিস্ময়ে তারা দুজন দুজনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। তবে তারা কোনো কারণ বুঝতে পারেন না।

জেরিন মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। বয়স ১০ বছর। সে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। এবার লটারির মাধ্যমে সরকারি ওই ইশকুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সে। লেখাপড়ায় খুব ভালো। বড্ড হাসি-খুশি। চঞ্চলায় পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে সে। সকালে-বিকেলে নানা ধরনের বায়না লেগেই থাকে। কোনো সময় আব্বুর কাছে। কোনো সময় আম্মুর কাছে। নানু এলে নানুর কাছেও আবদার। তবে তার বেশি আবদার খেলনার। শোকেচ ভরা তার খেলনাপাতি। যখন যেটা ইচ্ছে বের করে দিতে হয় তাকে। নিজের হাতে পুতুল সাজায়। পুতুলের বিয়ে দেয়। একা একা গুনগুন করে গানও গায়। তবে দু’দিন হলো জেরিনের মনটা ভার, মুখটা মলিন! কী হয়েছে তার? আব্বু-আম্মু কিছুতেই যেন কিছু বুঝতে পারেন না। 

বিকেলে আব্বু অফিস থেকে ফিরেই দেখলেন জেরিন ড্রয়িং রুমে। টিভি চলছে। কিন্তু জেরিনের চোখে পানি। জেরিন তোমার কী হয়েছে? আম্মু কি বকা দিয়েছে? কোনো জবাব দেয় না জেরিন। চোখের পানি গড়িয়ে গড়িয়ে বুকে পড়ে তার। আব্বু কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। তিনি ভাবলেন হয়তো ওর আম্মু ওকে কিছু বলেছে। আম্মু রান্না ঘরে চাল বাছছিলেন। তাকে জেরিনের কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনিও ছুটে আসেন ড্রয়িং রুমে। জেরিনের চোখে পানি দেখে তিনিও জানতে চান কী হয়েছে সোনা? জেরিন জবাব দেয় না। কিন্তু তার চোখ টেলিভিশনের পর্দায়। খবরের চ্যানেলে চলছে বন্যা দুর্গতদের সংবাদ। বানভাসি হাজারো মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। নেই তাদের বসবাসের জায়গা। নেই খাবার। বানের পানিতে ভেসে যাচ্ছে নাম না জানা মানুষের লাশ। দুর্যোগে গবাদি পশুরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। কী মানবিক বিপর্যয়। টেলিভিশনের এমন প্রতিবেদন দেখে জেরিনের শিশুমন কেঁদে ওঠে। ওদের জন্য ওর খুব কষ্ট হয়। এবার জেরিন শব্দ করে কেঁদে ওঠে। আব্বু তাকে কোলে তুলে নেন। বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছে আম্মু বলো তো? এবারও জেরিন কোনো জবাব দেয় না। প্রায় ১০ মিনিট ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে সে। এরপর জেরিন টেলিভিশনের দিকে ইশারা দিয়ে জানতে চায়, বাবা ওরা থাকবে কোথায়? ওদের তো ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে, ওরা খাবে কী? জেরিনের প্রশ্ন শুনে সব বুঝতে পারেন ওর আব্বু-আম্মু। জেরিনকে পইপই করে সব বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলতে থাকেন। আব্বু বলেন ‘ওরা এখন খুব অসহায়। দেশের অন্য যেসব এলাকা ডোবেনি সেসব এলাকার মানুষ ওদের সাহায্য করছে। বিভিন্ন ধরনের খাবার, কাপড়চোপড় এবং টাকা পয়সা পাঠিয়ে ওদের সাহায্য করছে। আমিও আমার একদিনের বেতন বানভাসি মানুষের জন্য দিয়ে দিয়েছি।’ এবার খুশিতে জেরিনের চোখ দুটো চকচক করে ওঠে। সে আব্বুর কোল থেকে নেমে সোজা চলে যায় শোবার ঘরে। খাটের নিচ থেকে বের করে নিয়ে আসে তার মাটির ব্যাংকটি। দুই বছর ধরে সে তার ওই ব্যাংকে টাকা জমিয়েছে। ব্যাংকটি আব্বু-আম্মুর সামনে এনে ভেঙে ফেলে সে। ড্রয়িং রুমের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে কয়েক হাজার টাকা। জেরিন বলল আব্বু আমি এসব টাকা বানভাসি মানুষের জন্য দিয়ে দিলাম, তুমি আজই টাকাগুলো পাঠিয়ে দাও।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS