ভিডিও

জঙ্গি সংগঠনে জনবল দিতেন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা, ডিবির হাতে ধরা

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৪, ০৬:৫৯ বিকাল
আপডেট: মে ১৪, ২০২৪, ০৬:৫৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত রানা শেখ ওরফে আমির হোসাইন গোপনে কাজ করছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার রিক্রুটার হিসেবে।

 

ইতোমধ্যে তিনজনকে সংগঠনে যোগদান করিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানে কুকি চিনের আস্তানায় পাঠান তিনি। এমনকি প্রশিক্ষণের খরচ বাবদ কুকি চিনের কাছে লক্ষাধিক টাকাও পাঠান এই রানা।

 

সোমবার পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) গোয়েন্দা তথ্য ও সহযোগিতায় রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলী এলাকায় রানাসহ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃত বাকিরা হলেন- মশিউর রহমান ওরফে মিলন তালুকদার ও হাবিবুর রহমান।

 
 

এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি স্মার্টফোন ও দুটি বাটনফোন উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে তাদের প্রশিক্ষণের ভিডিও ছবি আছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত রানা ২০০২ সালে হুজিনেতা ও ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মাওলানা আব্দুর রউফের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য ময়মনসিংহে যান। ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার পাশাপাশি হুজি সদস্য সামরিক ও আনআর্মড কমব্যাট প্রশিক্ষণ নেন।

তিনি জানান, ২০০৩ সালে বাবা, মামা, ভগ্নিপতিসহ মোট ১৮ জন সদস্য হুজি নেতা আব্দুর রউফের সঙ্গে বৈঠকের সময় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে।

হারুন বলেন, বর্তমানে আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত এই রানা সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য ৩ সদস্যকে ইতোমধ্যে বান্দরবানে কুকি চিনের সন্ত্রাসীদের কাছে পাঠিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মশিউর রহমান প্রথমে ইসলামিক শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সদস্য ছিল। ২০০২-০৩ সালে হুজির সদস্য হিসেবে ময়মনসিংহে আব্দুর রউফের মাদ্রাসায় সামরিক ও আনআর্মড কমব্যাট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৩ সালে অপরাপর হুজি নেতাদের সঙ্গে গ্রেনেডসহ ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে চার বছর জেল খাটেন।

ডিবি জানায়, ২০২১ সাল থেকে পাহাড়ি বৈরী পরিবেশে কমান্ডো হিসেবে টিকে থাকা, পিটি-প্যারেড শেখা, আনআর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল চালানো, বোমা সামগ্রী তৈরি এবং ব্যবহারসহ CQB বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য দুই বছর বান্দারবানে কুকি চিনের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অবস্থান করেন। এই কষ্টকর প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে সমতলে ফেরত আসেন মশিউর।

আর হাবিবুর রহমান ছিলেন সংগঠনের নতুন রিক্রুট। তিনি আলফা ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মী হিসেবে আমির হোসেনের অধীনে কাজ করতেন। আমির হোসেন একই মতবাদে দীক্ষিত করে তাকে ইতোমধ্যে জঙ্গি সংগঠনে রিক্রুট করে বান্দরবানে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

 

ডিবিপ্রধান বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম ও জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) মুক্তিপ্রাপ্ত এবং পলাতক বেশ কিছু সদস্য মিলেমিশে একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ গঠন করে।

নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা ও সদস্যরা বিশ্বাস করে 'গাজওয়াতুল হিন্দ' নামক ধর্ম যুদ্ধ হবে। কোনো এক সময় দাজ্জালের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে মুসলিম নিধনের বড় রকমের চেষ্টা করা হবে। ইসলামকে সমুন্নত রাখতে এবং মুসলমানদেরকে সুরক্ষা দিতে যারা 'গাজওয়াতুল হিন্দ' নামক এ ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন তারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ অথবা গাজীদের মতো মর্যাদা পাবেন।

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ধারাবাহিক তৎপরতায় সফল জঙ্গি অভিযানের কারণে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটি সমতল এড়িয়ে পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ খুঁজছিল। পার্বত্য বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে বসবাসকারী বম সম্প্রদায়ের বিভ্রান্ত সন্ত্রাসীদের দ্বারা গঠিত কুকি চিনদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় শারক্বীয়ার।

 

অর্থের বিনিময়ে কু কি চীনের সন্ত্রাসীরা শারক্বীয়ার সদস্যদেরকে বৈরী পরিবেশে সারভাইবাল, আনআর্মড কমব্যাট, অ্যাসল্ট রাইফেল পরিচালনা, এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস তৈরি এবং ব্যবহার, CQB তে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়।

দেশকে অস্থিতিশীল করে জঙ্গিদের খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা, নিজ দেশ এবং পার্শ্ববর্তী দেশের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধে জড়িয়ে শহীদ বা গাজী হওয়ার অপেক্ষায় থেকে রসদ সামগ্রী এবং কর্মী সংগ্রহে তৎপর ছিল সংগঠনটি।

পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অভিযানে এদের অনেক সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংগঠনটিতে ৫৩ জনের মতো সদস্য ছিল। এরমধ্যে ৪৯ জনই ইতোমধ্যে ধরা পড়ে গেছে। গ্রেপ্তার রানা বর্তমানে সংগঠনের প্রধান রিক্রুটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।

 

সারা দেশ থেকেই তাদের সদস্য রিক্রুটের পরিকল্পনা ছিল। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে হয়তো আরেকটা গ্রুপকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো।

হারুন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের চার দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে। তাদের সঙ্গে জড়িত আর কারা আছে জানার চেষ্টা করব। জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS