ভিডিও

কবিতাকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নেন কাজী নজরুল : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৪, ১০:৪০ দুপুর
আপডেট: মে ২৫, ২০২৪, ১২:৫৮ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

শনিবার (২৫ মে) ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর বিদায় এবং বিংশ শতাব্দীর আগমন লগ্নে নজরুলের জন্ম। তখন বাংলাদেশসহ গোটা উপমহাদেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি। একদিকে দারিদ্র্য অন্যদিকে দেশমাতার পরাধীনতা কবিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় পাগলপ্রায় করে তুলেছিল। কবি অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেন। রাজদ্রোহের অপরাধে কারাবরণ করেন। কবিতাকে বেছে নেন প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুলের লেখনীতে ফুটে ওঠে আর্ত-পীড়িত, ব্যথিত ও উপেক্ষিত মানবমনের কথা। কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কবি নজরুল অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুগে যুগে মানুষকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উচ্চকণ্ঠ হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তার কাছে ধর্ম, গোত্র, জাত-কুল, ধনী গরিব সব শ্রেণির মানুষ ছিল সমান। তার গানে প্রেম ও প্রকৃতি অপরূপ রূপে ধরা দিয়েছে। তাই কবি নজরুল একাধারে দ্রোহ ও মানবতার কবি; সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার কবি; সত্য, সুন্দর, কল্যাণ, প্রেম ও হৃদয়াবেগের কবি।

তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক, কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল তার স্বল্পকালীন সৃষ্টিশীল জীবনে রচনা করেছেন প্রেম, প্রকৃতি, বিদ্রোহ ও মানবতার অনবদ্য সব কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস ও নাটক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং সঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান স্বাতন্ত্র্য মহিমায় সমুজ্জ্বল। কবি নজরুলের সাহিত্য ও সঙ্গীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তির দীক্ষাস্বরূপ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নজরুলের ক্ষুরধার লেখনীর স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি তার বাণী ও সুরের অমিয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজীবন তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত।

শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনও প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় কবির জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমাদের সরকার গত ১৫ বছরে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। আমরা নজরুলের সৃষ্টিসমূহের সংগ্রহ, সংকলন, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নজরুল জাদুঘর সংস্কার ও মেরামত, নজরুল অ্যালবাম প্রকাশ, নজরুল সঙ্গীতের সিডি প্রকাশ, শুদ্ধ সুর ও বাণীতে নজরুল সঙ্গীতের প্রশিক্ষক তৈরির বিশেষ কোর্স চালু এবং নজরুলের অপ্রচলিত গানের সুর সংগ্রহ, স্বরলিপি প্রণয়ন, সংরক্ষণ, প্রচার ও নবীন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধকরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নজরুল সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, কুমিল্লায় নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র স্থাপন, ঢাকাস্থ নজরুল ইনস্টিটিউটের ১১তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় বিদ্যমান ভবনের সংস্কার করেছি। আমাদের সরকারের এসব কার্যক্রম নজরুল-চর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে যা অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়, সমতাভিত্তিক উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথকে প্রশস্ত করবে বলে আমি আশা করি।

তিনি বলেন, মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের সংগ্রামশীল জীবন এবং তার অবিনাশী রচনাবলি বাঙালি জাতির জন্য অন্তহীন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে কাজী নজরুল ইসলামের অবিনশ্বর উপস্থিতি সকল কূপম-কতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS