ভিডিও

এমপি আজীমকে কলকাতায় রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন সিলিস্তি

আজীম হত্যাকাণ্ড : তিন আসামি এবার ৫ দিনের রিমান্ডে

মামলা লড়তে আইনজীবী চান না শিলাস্তি, অন্যরা চাইলেও পাননি : হত্যার তদন্তে এবার মাঠে নামল ‘সিট’ : ভারতের পূর্ণ সমর্থন

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৪, ১০:১৯ রাত
আপডেট: মে ৩১, ২০২৪, ১১:০৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করার মামলায় তিন আসামির এবার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিরা হলেন- সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলাস্তি রহমান।

আট দিনের রিমান্ড শেষে আসামিদের শুক্রবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের আট দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২৪ মে দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিন আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার সুষ্ঠু-তদন্তের জন্য তাদের দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট      দিলরুবা আফরোজ তিথি আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগের দিন ২৩ মে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমানকে অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার।

 ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

এ ঘটনায় ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

এমপি আজীমকে কলকাতায় রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন সিলাস্তি : কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। রহস্যে ঘেরা এমপি আনার হত্যার পর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। এ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশে গ্রেফতার তিন আসামির মধ্যে আলোচিত নাম সিলাস্তি রহমান। এ সিলাস্তি রহমান আগে থেকেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসে উপস্থিত ছিলেন। হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এমপি আনারকে রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন সিলিস্তি রহমান। রিমান্ড আবেদনে এ কথা উল্লেখ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মামলা লড়তে আইনজীবী চান না শিলাস্তি, অন্যরা চাইলেও পাননি : এদিন রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু আসামিদের রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। তবে আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। আসামিদের এজলাসে নেওয়ার পর কয়েকজন আইনজীবী আসামি পক্ষে মামলা লড়তে তাদের ওকালত নামায় স্বাক্ষর নিতে চান। এসময় উপস্থিত পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা আইনজীবীদের বলেন আদালতের সামনে আবেদন করে স্বাক্ষর নিতে। শুনানির একপর্যায়ে বিচারক আসামি শিলাস্তি রহমানকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি আইনজীবী নিয়োগ করতে চান? জবাবে শিলাস্তি আইনজীবী নিয়োগ দিতে চান না বলে বিচারককে জানান।

অপর দুই আসামিকে জিজ্ঞেস করলে তারা একে অপরের দিয়ে চেয়ে পুলিশ সদস্যদের জানান তাদের পক্ষে আইনজীবী নেই, তবে মামলা লড়তে আইনজীবী চান তারা। এরপর আদালত তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে দুপুর ২টা ৫৬ মিনিটে তিন আসামিকে আদালত থেকে বের করে ডিবির গাড়িতে তোলা হয়। এরপর গাড়ি ডিবি কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

হত্যার তদন্তে এবার মাঠে নামল ‘সিট’ : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার তদন্ত আরও গতি পেল। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি এই তদন্তকে ‘হাইপ্রোফাইল’ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) বা ‘সিট’ গঠন করে তদন্ত শুরু করেছে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সব মামলার তদন্ত করতেই সাধারণত স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা এসআইটি গঠন করা হয়। এটিকে ‘সিট’ বলেও দাবি করা হয়। এমপি আনার হত্যা মামলা গ্রহণের ৯ দিনের মাথায়, মামলার তদন্তকারী সংস্থা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা সিআইডির মধ্যে নতুন এই দল গঠন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন আইজিকে। সঙ্গে রয়েছেন আরও ১২ জন অভিজ্ঞ গোয়েন্দা। আপাতত ১৩ জনের এই গোয়েন্দা দলই আনার হত্যা মামলার তদন্ত করবে বলে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

নতুন তদন্ত দলটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এদিকে আনার হত্যাকান্ডে জড়িত, নেপালে পালিয়ে থাকা সিয়ামের গতিবিধিও নজরবন্দি করা হয়েছে। সেখানে সিআইডি ছাড়াও কাজ করছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ বা স্পেশাল টাস্কফোর্স। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সেখানে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাও একইভাবে কাজ করছে। তবে নেপালে গ্রেফতার হলে সিয়ামকে কীভাবে আনা হবে, সেই বিষয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল- তিন দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে এরই মধ্যে আলোচনা শেষ হয়েছে।

জানা গেছে, এমপি আনার হত্যার অন্যতম অভিযুক্ত সিয়াম মরদেহ গুম করে নেপালে আত্মগোপন করেছে। আর সিয়ামের বিষয়ে কলকাতায় গ্রেফতার হওয়া কসাই জিহাদও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, ভিসা না পাওয়ায় এমপি আনারের মেয়ে ডরিন ও এমপির ব্যক্তিগত সহকারী এখনও কলকাতায় যেতে পারেননি। শনি ও রোববার দুদিন বন্ধ থাকায় সোমবারের আগে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।

এছাড়া গত ২৮ মে উদ্ধার হওয়া মাংসপিন্ডের ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছেছে বলে মনে করছে গোয়েন্দা সূত্রগুলো।

তদন্তে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে ভারত : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যা মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে ভারত। এ কথা জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। জয়সওয়াল বলেন, আমাদের দিক থেকে সরকার এ বিষয়ে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে। জয়সওয়াল বলেন, এই বিশেষ মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সমন্বয় করছে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় তথ্য বিনিময় করা হচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS