ভিডিও

নেতাদের বাসায় বাসায় তল্লাশি

বিএনপিতে গ্রেফতার আতঙ্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৪, ১১:০৮ রাত
আপডেট: জুলাই ২৪, ২০২৪, ১০:৪৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছায়েদুল আলম বাবুল, পেশাজীবী নেতা ইঞ্জিনিয়ার শাখাওয়াত হোসেন, মহানগর সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাসেম বকরসহ শতাধিক নেতাকর্মী। এর ফলে গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন বিএনপির কেন্দ্রীয়, মধ্যম ও মাঠ পর্যায়ের নেতারা। আটককৃত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন রিমান্ডে। আবার কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নাশকতার মামলায় ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকায় করা হয়েছে ৩০ এর বেশি মামলা; গ্রেফতার করা হয়েছে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে। সোমবার এক দিনে ৩৫০ জন কারাগারে এবং ১১ নেতাকর্মীকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ জনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে ১৪ মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩৫ হাজার, সিলেটে সাত মামলায় ১০ হাজার, বরিশালে পাঁচ মামলায় বিএনিপর আট শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। 
এই পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলেও বেশির ভাগ ঘটনায় আসামি হচ্ছেন দলটির সাঁড়াশি অভিযানে দলটির সিনিয়র নেতাসহ একেবারে তৃণমূল কর্মী পর্যন্ত গ্রেফতার হচ্ছেন। চলছে বাসাবাড়িতে তল্লাশি। এ রকম পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। 
এদিকে, ছয় দিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। গত ১৭ জুলাই পুলিশি তল্লাশি শেষে তালা মেরে দেওয়ায় রাজনৈতিক কার্যক্রমও নেই। ফলে দলের কত নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বা কতজন আহত হয়েছেন, তার পরিসংখ্যান নেই দলটির কাছে। তবে দলীয় আইনজীবীরা জানান, শুধু ঢাকাতেই এখন পর্যন্ত হাজারের ওপর নেতাকর্মীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।


নেতাদের গ্রেফতার ছাড়াও তাদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আবদুস সালামসহ আরও অনেকের বাসায় তল্লাশি করা হয়েছে। এসব তল্লাশির সময় বেশির ভাগ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ না উঠলেও কিছু জায়গায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার পাশাপাশি তাদের স্বজন-ঘনিষ্ঠজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগর উত্তর বিএনপির নেতা আমিনুল হক যে বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন, সে বাসার মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমিনুল হকের মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীর পারিশ্রমিক নিয়ে আদালতে যান তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সোহেল। তাকেও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন আমিনুলের বড় ভাই মঈন হক। সুলতান সালাউদ্দিন টুকুও যে বাসায় ছিলেন সে বাসার মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের তারেক রহমানকে গ্রেফতারের সময় বাসায় তার শ্যালক সজল ও ফয়সালকে আটক করা হয়। গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নূরুল হক নুরকে আদালতে তোলা হবেÑ এমন সংবাদে সেখানে যাওয়া দলটির ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা অর্ণব হোসাইন, রাজীবন মোল্লাসহ নুরুল হকের ছোট ভাই আমিনুল হককে গ্রেফতার করা হয় আদালত চত্বর থেকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নয়াপল্টন অবস্থিত রাজনৈতিক কার্যালয়ে গভীর রাতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কার্যালয়ে কেউ ছিলেন না। এ সময় গয়েশ্বরের রাজনৈতিক কক্ষ, বিশ্রাম কক্ষ এবং তার পুত্রবধূ বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীর কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর হয়। গয়েশ্বর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ ও যুবদলের সাবেক নেতা আমিনুল ইসলাম জানান, শুধু ভাঙচুর নয়; লুটপাটও করা হয়েছে। গয়েশ্বরের তিনটি মোবাইল ফোনসহ টাকা, অন্যান্য মূূল্যবান সামগ্রী নেওয়া হয়েছে। কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলা হয়।
এদিকে, কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এর নয়াপল্টনস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী এহেসানুল হুদা, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নাজমুল হক সনি, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব তারেকসহ দেশব্যাপী বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, কারান্তরীণ ও নাজেহালের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বনানী থেকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে আটক করা হয়। গত রোববার ভোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে গত রোববার ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকেও নিজ বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে দলীয় সূত্রে দাবি করেছে। 
বিএনপির মহাসচিব অবিলম্বে দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন, নিপীড়ন, নির্যাতন বন্ধ করে আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS