ভিডিও

বন্যার্ত এলাকায় মানবিক বিপর্যয়

ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধকোটি মানুষ, ৬ জনের মৃত্যু, ঢাকার সাথে সিলেট ও চট্টগ্রামের ট্রেন চলাচল বন্ধ, ৫ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, ১১ জেলায় ১৫১০ মোবাইল টাওয়ার অচল

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ১১:০৭ রাত
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ১০:৫৯ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

করতোয়া ডেস্ক : টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দেশের ১০টি জেলায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এতে মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে বন্যার্ত এলাকার মানুষ। এ সব অঞ্চলে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে হু হু করে ঢুকছে পানি। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে বিপাকে কয়েক লাখ মানুষ। ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ১০ জেলার অর্ধকোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।  কুমিল্লাতেই ৪ জন মারা গেছে।

আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সচিবালয়ে চলমান বন্যা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে।

পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দিতে মোট এক হাজার ৫৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন লোক এবং ৭ হাজার ৪৫৯টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।

তিনি বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী সময়ে উন্নতি হতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য তুলে ধরে আলী রেজা আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী সময়ে উন্নতি হতে পারে। অতিরিক্ত সচিব বলেন, মারা গেছেন দুইজন (ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন)। আট জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৪৪৪টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।

এছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।

ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ও ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে। এছাড়া বিজিবিসহ আরও নৌযান আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব।

বন্যাকবলিত মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকার সার্বিকভাবে চেষ্টা করছে :

ত্রাণ উপদেষ্টা : বন্যাকবলিত এলাকায় সরকার সার্বিকভাবে মানুষের জানমাল রক্ষায় চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বন্যার বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, প্রথম হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব মানুষের জীবন বাঁচানো। মানুষের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। সেখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেগুলো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ত্রাণ মন্ত্রণালয় সঙ্গে কাজ করে, তাদের সবাইকে নিয়োজিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেসব ছাত্ররা ছিলেন তারাও উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সার্বিকভাবে প্রশাসন চেষ্টা করছে, সরকার চেষ্টা করছে যেন মানুষের জানমাল, গবাদি পশু ইত্যাদি যেন রক্ষা করা যায়। ‘ত্রাণ হিসেবে নগদ এবং চাল বরাদ্দের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে। উপদ্রুত অঞ্চলে সকল শক্তি নিয়োজিত করা হয়েছে। বৃষ্টি কমলে দ্রুত পানি নামলে তখন আমরা পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু করব।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা বলেন, বন্যার পূর্বাভাস ছিল না, এটি ছিল ফ্ল্যাশ ফ্লাড। কেউ বলছেন উজান থেকে ভারতীয় অঞ্চল থেকে পানি নেমে এসেছে, বন্যা যেভাবে প্রাকৃতিকভাবে হয়, খুব দ্রুতই হয়েছে। পানি এত দ্রুত বেড়েছে যে অনেক উপদ্রুত এলাকায় যাওয়া যাচ্ছে না।

বন্যায় ঢাকার সাথে সিলেট ও চট্টগ্রামে ট্রেন চলাচল বন্ধ : টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দেশের ১০টি জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে মহাসড়ক ও রেললাইনে। এমন অবস্থায় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ওই দুই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়।

এতে বলা হয়, আকস্মিক বন্যায় সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক জায়গায় রেলপথ ডুবে গেছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সকল আন্তঃনগর, কমিউটার ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

বন্যাকবলিত এলাকার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৮ নির্দেশনা : বন্যাকবলিত এলাকার জন্য আটটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় চিকিৎসা সরঞ্জাম, চিকিৎসক-নার্সদের কর্মস্থলে থাকা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সমন্বয় ও যোগাযোগ রাখাসহ এসব নির্দেশা দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসানের সই করা এক নির্দেশনায় এসব তথ্য জানানো হয়।


বিআইডব্লিউটিএ বন্যাকবলিত এলাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল : প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতিতে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট এলাকার অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর, দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিআইডব্লিউটিএর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যাকবলিত এলাকায় একটি উদ্ধারকারী দল সরঞ্জামসহ ১০টি স্পিডবোট পাঠানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, যে কোনো প্রয়োজনে বিআইডব্লিউটিএর প্রধান দপ্তরের কন্ট্রোল রুম (ফোন নম্বর ০২২২৩৩৫৮৫৬৬) অথবা হটলাইন ১৬১১৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

বন্যায় ৫ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন : সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিদ্যুৎহীন গ্রাহকের সংখ্যাও বাড়ছে। একের পর এক বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র তলিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বন্যায় ৫ লাখ ৭ হাজার ৯০০ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিচালন ও বিতরণ) দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, শুধু ফেনীতে সাতটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে এবং ১১ কেভি ফিডার বন্ধ আছে ৪৯টি।

এ জেলায় এক লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছেন। চাঁদপুর-১ পল্লী বিদ্যুতের উপকেন্দ্রের সবকটি চালু থাকলেও ছয়টি ১১ কেভি ফিডার বন্ধ। এই জেলায় চার হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন। নোয়াখালীতে একটি উপকেন্দ্র এবং ৫১টি ১১ কেভি ফিডার বন্ধ। তিন লাখ ৪৩ হাজার ৯০০ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন।

বন্যায় ১১ জেলায় ১৫১০ মোবাইল টাওয়ার অচল, বেশি ফেনীতে : প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ সেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

 আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্যায় প্লাবিত ১১ জেলায় দেড় হাজারের বেশি মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফেনীতে। অচল টাওয়ারগুলোর মধ্যে ৪২ শতাংশ ফেনীর এবং ৪১ শতাংশ খাগড়াছড়ির। অচল টাওয়ারগুলো সচলে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিটিআরসি। দুপুর পৌনে ২টার দিকে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

চাঁদপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, শহরে জলাবদ্ধতা : টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুর জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় মসজিদ, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে। শহর ঘুরে দেখা যায়, বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড, নাজিরপাড়া, ট্রাকরোড, রহমতপুর কলোনি, ব্যাংক কলোনি, চেয়ারম্যান ঘাট, চাঁদপুর সরকারি কলেজ গেট, তালতলা সড়কে পানি জমে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।

এদিকে বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে বীজতলা, শাক-সবজির মাঠ। এছাড়া জমিতে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক ফসলের কাজ করতে পারছে না। বিশেষ করে চাঁদপুরের হাইমচরে পানিতে ভেসে গেছে পান চাষিদের স্বপ্ন। বৃষ্টির পানিতে আবাদকৃত পান নষ্ট হয়ে গেছে।

রাঙামাটিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ২০ স্থানে পাহাড়ধস : টানা বর্ষণে রাঙামাটির ২০টি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কিছু জায়গায় পাহাড়ধসে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে যান চলাচল সচল করেন। তবে মহালছড়ি এলাকায় সড়কে পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আন্তজেলা যান চলাচল।

এদিকে, জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। কাউখালী উপজেলার ইছামতি ও কাউখালী খালে পানি বেড়ে ডুবে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি ঘর।

কুমিল্লায় বন্যায় চার জনের মৃত্যু : কুমিল্লায় বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে দুই দিনে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার তিন জন এবং সোমবার একজন মারা গেছেন। বুধবার জেলার নাঙ্গলকোটে বন্যার পানিতে তলিয়ে কেরামত আলী (৪৫) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। এদিন রাতে তার মৃত্যু হয়। তিনি পৌরসভার দাউদপুর এলাকার বাসিন্দা। একই দিন বিকালে বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুতের পিলারের সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়।

সে নগরীর ছোটরা এলাকার বাসিন্দা। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক যোবায়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিন সকালে চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। পৌরসভার সোনাকাটিয়া (আদর্শ গ্রাম) পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে।

এর আগে, সোমবার সোহরাব হোসেন সোহাগ নামে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন বিকালে কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যান তিনি।

লক্ষ্মীপুরে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি : টানা বর্ষণ ও মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি জমে লক্ষ্মীপুরের সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয়দের সহযোগিতায় খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া পানিবন্দিদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জের সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

হাঁটু পানি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে, যোগাযোগ বন্ধের শঙ্কা : অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে প্লাবিত হয়েছে কুমিল্লাসহ আশপাশের এলাকা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কিছু অংশও ডুবে গেছে। সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে যানজট।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রী সাধারণ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ যানজট শুরু হয়।

মৌলভীবাজারে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ৩৭ ইউনিয়ন, দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি : টানা তিনদিনের আকস্মিক ভয়াবহ বিপর্যস্ত গোটা মৌলভীবাজার। ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরের দিকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর,  কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলাসহ ৪ টি উপজেলায় মনু নদ ও ধলাই নদীর সর্বমোট ১৩টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে।

আখাউড়ায় ভেঙেছে হাওরা নদীর বাঁধ, পানিবন্দি ১২ শতাধিক পরিবার : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার হাওরা নদীর বাঁধের দুইটি স্থানে ভেঙে গেছে। এতে করে বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আখাউড়া উপজেলার কর্ণেল বাজার এলাকায় হাওরা নদীর বাঁধের একটি স্থান ভেঙে যায় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

নোয়াখালীতে পানিবন্দী ২০ লাখ মানুষ, পানি ও খাবারের সংকট : টানা ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানতে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে আটটিই প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট।

আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলায় ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। সারা দিন থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে, কখনো সেটি ঝোড়ো বাতাসসহ ভারী বর্ষণে পরিণত হয়েছে।

‘চারপাশে শুধু পানি আর পানি, ৬০ বছরেও এমন দেখিনি’ : ‘চারপাশে শুধু পানি আর পানি। জন্মের পর ৬০ বছরের মধ্যে এবারের মতো এত পানি দেখিনি। পানি নামার কোনো লক্ষণ দেখি না। পুরো কোম্পানীগঞ্জের অবস্থাই খারাপ। সরকার থেকে কিছু বরাদ্দ দিয়েছে কিনা তাও আমাদের জানা নেই। আমরা কোনো ত্রাণ পাইনি।’ গতকাল দুপুরে দুর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বাবুল মিয়া (৬০)।

তিনি বলেন, পানিতে রান্নাঘর, বসতঘর, টয়লেটসহ বাড়ির সবকিছু ডুবে গেছে। মানুষ না খেয়ে আছে। ঘরের জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রেও জায়গা নেই। দূরের মানুষরা সেখানে আশ্রয় নেওয়ায় এখন আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খোয়াই নদীর সব পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শহরতলির জালালাবাদ এলাকার বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে রিচি ও লোকড়া ইউনিয়নের হাওড়ে রোপা আমন ও মৎস্য খামারিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে; বুধবারই ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়েছে সিঙ্গিনালা গ্রামের ৪০ বছরের পুরানো সেতু। এতে মহালছড়ির সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙামাটির সাজেক, লংগদু ও বাঘাইছড়িতে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।

জেলায় পানিবন্দি এখনো প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। বন্যায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছ; নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার, মোমবাতি ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS