ভিডিও

সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে তোপের মুখে বগুড়া ছাড়লেন সমন্বয়করা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ১১:১৮ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৭:১৪ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপার্টার : শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বগুড়া ছাড়লেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার, কুবরাতুল আইন কানিজসহ অন্যান্য নেতৃবন্দ। আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তারা বগুড়া ছাড়তে বাধ্য হন।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের মুক্তমঞ্চে বিকেল ৩টায় বৈষম্যবিরোধ্যী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে মত-বিনিময় সভা হওয়া কথা ছিলো। বিকেল সাড়ে তিনটার কিছু পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার,কুবরাতুল আইন কানিজসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ বিশাল একটি মিছিল নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।

এ সময় মুক্তমঞ্চের পাশেই অবস্থান নিয়ে তারা কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কগণসহ আন্দোলনে বগুড়ায় নেতৃত্বদানকারী স্থানীয় সদস্যদের নিরাপত্তার কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও অধ্যক্ষের কক্ষে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

এ সময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের সাথে ৫ মিনিট কথা বলার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অনুমতি চাইলেও তাদের নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রায় দুইঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় মাহিন সরকার গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

মাহিন সরকার বলেন, আমরা কলেজে আসার পরপরই একটি বিশাল মিছিল থেকে আমাদের উদ্দেশ্য করে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। তারা না কী সারজিস ও হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে চান। আমরা বলেছি,তাদের সাথে আমরা সাথে কথা বলিয়ে দেব। কিন্তু এরপরও তারা আমাদের ছাত্র-জনতার সাথে কথা বলতে দিতে চান না। তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আমাদের কাছে স্পষ্ট।

আমরা বলে দিতে চাই আমরা যখন একবার মরেছি, আবারও মরতে জানি। কোন কিছুতেই আমরা ভয় পাই না। এসব ভয়-ভীতি আমরা তুড়ি মেরে উড়ে দিতে জানি। আমরা বগুড়ার প্রশানের কাছে বার বার অনুরোধ জানিয়েছি যেন আমাদের ৫টি মিনিটের জন্য ছাত্রদের সাথে কথা বলতে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার কথা বলে তা দেওয়া হয়নি।

যে গ্রুপটি আমাদের বিরুদ্ধে মিছিল করছে তাদের ধারণা আমরা না কী কমিটি দিচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও আমরা কোন কমিটি দেইনি। তিনি আরও বলেন বিপ্লব পরবর্তী যে ভঙ্গুর রাষ্ট্র, তা মেরামতের জন্য জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। আমরা সেই ঐক্যের ডাক দেওয়ার জন্যই বিভিন্ন জেলায় জেলায় যাচ্ছি। প্রতিটি জেলায় অসংখ্য হতাহত হয়েছে।

অসংখ্য আহতরা এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। আমরা যদি মাঠ পর্যায়ে না যাই, তবে কী করে জানবো কোথায় কত শহীদ আছে, কোথায় কতজন আহত হয়েছে। আমরা সেই কাজগুলো করতেই এখানে এসেছি। কিন্তু এখানে আমাদের অসহযোগিতা করা হয়েছে।

আমরা যেন কোন প্রোগ্রাম করতে না পারি এজন্য বাধা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সিরাজগঞ্জেও আমাদের বলা হয়েছে আমরা যেন প্রোগ্রাম না করি এবং নাটোরে বলা হয়েছে আমাদের প্রোগ্রাম না করাই উত্তম। এখানে প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, আমরা যদি প্রোগ্রাম করি তবে ব্যাপক রক্তপাত হবে। অন্যান্য জেলায় গিয়ে আমরা যে সহযোগিতা পেয়েছি এখানে সেই সহযোগিতাটুকুও পাইনি।

এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় তারা কলেজ ক্যম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন। এর আগে সকালে বগুড়ায় গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।

রাজশাহী জোনের বিভাগীয় ছাত্র-নাগরিক মৈত্রী সফরের অংশ হিসেবে বগুড়ায় দিনব্যাপী কর্মসূচি তারা পালন করেন। সকাল ১১ টায় নামাজগড় গোরস্থানে বগুড়ার শহীদ সিয়াম শুভ ও শহীদ শিমুল মন্ডলের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় বগুড়ার অন্যান্য শহীদসহ সারা বাংলাদেশে সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।

মাহিন সরকারসহ রাজশাহী জোনের ছাত্র-নাগরিক মৈত্রী সফরের প্রতিনিধি দলের সদস্য কুররাতুল আইন কানিজ, সাইফুল ইসলাম, মো: ইফতেখার আলম (আসাদ), আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (মেহেদী), ফয়সাল আহমেদ, আল রাকিব, ফাতিন মাহদি, সাদিকুল ইসলাম স্বাধীন, শ্রী ঐশিক মণ্ডল জয়, ইমাম হুসাইন ইমন উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে ইজাজ আল ওয়াসী জিম, আলবীর ইসলাম শাওন, সাকিব খান, বিপ্লব মিয়া, নিয়তি সরকার নিতু, লায়েস আহম্মেদ, ছাব্বির আহম্মেদ রাজ, আকিব, জাকিরুল ইসলাম, সৈকত আহম্মেদ,নাজমুল ইসলাম নিহাল, আজিম উদ্দিন, সেজদা প্রামানিক,  মুশফিকা নাবা, আছিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কবর জিয়ারত শেষে বগুড়া জেলা পরিষদ মিলনায়তনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন নেতৃবৃন্দ। এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং আহতদের অনেকে মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS