ভিডিও

চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ বক্সের কাছে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ১১:৩৬ দুপুর
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ১১:৩৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নিউজ ডেস্ক:  চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কের জাহান মাল্টিপারপাস কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের অদূরে পুলিশ বক্সের কাছে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে প্রায় ২০-৩০ যানবাহনে ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায় ডাকাত দলের সদস্যরা। এসময় গাড়িচালকসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করা হয় এবং পরে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে পালিয়ে যান তারা।

পুলিশ বক্সের কাছেই ঘটনা ঘটলেও ছিল না কোনো পুলিশের টহল দল। ঘণ্টাব্যাপী ডাকাতদল তাণ্ডব চালালেও কিছু টের না পাওয়ায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দুষছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সন্তোষপুর পুলিশ বক্সের কাছে সড়কের ওপর খেজুর গাছ দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন ডাকাত দলের সদস্যরা। ওই ডাকাত দলে ১৫-১৬ জন সদস্য ছিলেন। তাদের সবার মুখ গামছা ও মাফলার দিয়ে ঢাকা ছিল। অধিকাংশ সদস্য হাফপ্যান্ট ও লুঙ্গি পরিহিত ছিলেন। এ সময় ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পথচারী ও গাড়ি চালকদের দেশীয় অস্ত্র রামদা ও হাসুয়ার মুখে জিম্মি করে লুট শুরু হয়। আবার কয়েকজনকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখমও করেন তারা। নারীরাও বাদ যাননি। তাদের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, রাতেই জীবননগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন ভুক্তভোগী চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে রাত ২টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেউ চিকিৎসা নেননি। তবে বেশিরভাগ ভুক্তভোগী ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদস্থানে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ছিল চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারি পশুহাট। এ দিনকে টার্গেট করেই হয়ত ডাকাতদলের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়ক দিয়ে বাড়ি ফেরা গরু ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ বাদ যায়নি ডাকাত দলের কাছ থেকে। যার কাছে যা ছিল সর্বস্ব লুটে নিয়েছেন তারা।

ডাকাত দলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর গ্রামের বাসিন্দা ট্রাকচালক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে ট্রাক নিয়ে জীবননগর হয়ে বাড়িতে ফিরছিলাম। সন্তোষপুর সড়কে পুলিশ বক্সের কাছে পৌঁছালে দেখতে পাই সড়কের ওপর খেজুর গাছ ও বিদ্যুতের পোলসহ ট্রলি আড়াআড়ি করে রাখা। গাড়ি থামাতেই ১৫-১৬ জন মুখোশ পরিহিত ব্যক্তি আমাকে রাম দা দিয়ে পিঠে ও গলাই কোপ মারেন। আমার হেল্পার রাজুকেও মারধর করেন তারা। আমার কাছে থাকা ট্রাকের ভাড়া বাবদ ১৫ হাজার টাকা তারা ছিনিয়ে নেন। এই অবস্থাতেই আমি বাড়ি ফিরেছি। এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছি।’

বগুড়া জেলার শান্তাহারের বাসিন্দা রুমন বলেন, কাজ শেষে ট্রাকে করে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনে আসছিলাম। এ সময় ‘সড়কের ওপর ব্যারিকেড দিয়ে ট্রাক, আলমসাধু, পাখিভ্যান, মিশুক, মোটরসাইকেলসহ প্রায় ২০-৩০ টির মতো গাড়ি থামিয়ে গণডাকাতি করে ডাকাতরা। তারা অনেকজনকে কুপিয়েছে। আবার অনেককে বেধড়ক পিটিয়েছে। এমন পেটানো আমি জীবনে দেখিনি। আমাকে রামদার উলটো পিট দিয়ে মারধর করে আমার কাছ থেকে নগদ ৭ হাজার টাকাসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে। এমনকি নারী যাত্রীদেরও বেধড়ক পিটিয়ে তাদের থেকে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়েছে। সড়কে কোনো পুলিশ ছিল না। ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালালেও পুলিশ আসেনি।’

ডাকাতের শিকার এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কের মতো গুরত্বপূর্ণ সড়কে সন্ধ্যারাতে এভাবে ডাকাতি হবে ভাবতেও পারিনি। এমনিতেই শিয়ালমারি পশুহাট ছিল। সেখান থেকে সবাই বাড়ি ফিরছিলেন। এ সড়কে অবশ্যই পুলিশি টহল থাকা উচিত ছিল। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাস্থলটি শাহাপুর পুলিশ ক্যাম্পের আওতাধীন। এ বিষয়ে শাহাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির তরফদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলে, এখন ব্যস্ত আছি। অভিযান চলছে। বিস্তারিত জানতে কিছুক্ষণ পরে কল করুন। তাকে আবার ফোন করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে বলে জেনেছি। ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে পুলিশ মাঠে নেমেছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS