ভিডিও

সাঘাটায় রেলের কোটি কোটি টাকার অরক্ষিত সম্পদ খোয়া যাচ্ছে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ১০:৩৫ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ১০:৩৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

জয়নুল আবেদীন, সাঘাটা (গাইবান্ধা) : দুই যুগের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী-তিস্তামুখ ঘাটের রেল যোগাযোগ। রেল কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় বন্ধ এ পথের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান সম্পদ অরক্ষিত থাকায় খোয়া যাচ্ছে।

তিস্তামুখ ঘাট হতে ভরতখালীর শেষ সীমানা পর্যন্ত রেলের জায়গা, কলোনী কোয়াটার, প্রভাবশালীরা অবৈধ উপায়ে দখল নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে যে যার ইচ্ছা মতো ভোগ করছে। হরিলুট করে নিয়ে যাচ্ছে এ রুটের রেললাইনসহ মূল্যবান সম্পদ। প্রতি নিয়ত দেদারছে রেলের মূল্যবান সম্পদ দখল ও হরিলুট হয়ে গেলেও এসব দেখার কেউ নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ হরিলুটের বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে দফায় দফায় অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার মিলছে না। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বোনারপাড়া রেল স্টেশন থেকে তিস্তামুখ-ঘাট পর্যন্ত রুটে অবস্থিত ভরতখালী স্টেশন। বিগত ১৯৩৮ সালে বৃটিশ সরকার, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ঢাকার সাথে উত্তর অঞ্চলের রংপুর দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধার রেল যোগাযোগ জন্য এ রেল পথ স্থাপন করা হয়।

দু’পারের সাথে যোগাযোগের জন্য তিস্তামুখ-ঘাট বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত যমুনা নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ হলে ফেরি সার্ভিসসহ রেল পথটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে বোনারপাড়া, ভরতখালী ও তিস্তামুখ-ঘাট পর্যন্ত রেল যোগাযোগ।

দুই যুগের অধিক সময় ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভরতখালী-তিস্তামুখ ঘাটের রেল পথসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ অরক্ষিত হয়ে পড়লে স্থানীয় একটি চক্র রেলপথের সমস্ত কাঠের মূল্যবান স্লিপারগুলো অনেক আগেই চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন তিস্তামুখ-ঘাট, ভরতখালী রেলস্টেশনের রেলপথে শুধু রেললাইন ছাড়া আর কিছুই নেই।

নিচের মাটি ক্ষয় হয়ে সরে এলোমোলো হয়ে গেছে রেললাইন। অযত্ন-অবহেলায় রেললাইনগুলো মরিচা পড়ে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেটে নিয়ে যাওয়া রেললাইলের অবশিষ্ট অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ পথে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায়, মূল্যবান রেললাইনগুলো মাদকাসক্তরা রাতে চুরি করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। স্টেশনের পিছনের থাকা গুদাম ঘর ও কোয়াটারসহ স্থাপনাগুলোর ইট ও মালামাল সবই চুরি হয়ে গেছে।

এছাড়া স্টেশনের অধিনে তিনটি কলোনীর কোয়াটার স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিজেদের মতো ব্যবহার করছেন। স্টেশনের এমন বেহাল অবস্থা চোখে পড়লেও এসময় রেল কর্তৃপক্ষের কোনো লোকজনকে পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী জানান, চালু অবস্থায় এ স্টেশন এলাকা ছিলো জমজমাট ও আনন্দমুখর। রেলপথ বন্ধ হওয়ার পর থেকে এ স্টেশন এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রেলের সাথে সংশ্লিøষ্ট এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। স্থানীয় লিটন মন্ডল জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে এই স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

প্রায় ১ হাজার একর জমি, ৩ টি স্টাফ কলোনী কোয়াটার, স্টেশন ঘর, গুদাম ঘর, ৯ টি রেল লাইন ছিলো এ স্টেশনের অধীনে। রেলের বিপুল অর্থের সম্পদ এখন সবই পরিত্যক্ত হলেও এসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই। সক্রিয় কোনো পদক্ষেপ না নিলে এ এলাকার বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব নয়।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের বগুড়া-বাদিয়াখালী রেল পথের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বন্ধ ভরতখালী রেল স্টেশনের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন সরকারি পাহারাদার নিয়োগ করা আছে। প্রয়োজনে আরও একজন পাহারাদার নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।

অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের দায়িত্ব ভূ-সম্পদ বিভাগের কর্মকতার। দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূ-সম্পদ বিভাগের কর্মকতার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS