ভিডিও

জিআই স্বীকৃতি মিললেও সংকটে কুষ্টিয়ার তিলের খাজা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৭:২৪ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৭:২৪ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :  শতবছরের বেশি সময় ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা। সম্প্রতি জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের স্বীকৃতি মিললেও নানা প্রতিবন্ধকতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না এ ক্ষুদ্রশিল্প। সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রসার ঘটছে না।

কুষ্টিয়ার তিলের খাজার নাম শোনেননি বা খাননি এমন মানুষ বাংলাদেশে পাওয়া দুষ্কর। দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় অনেক আগে থেকেই কুষ্টিয়ার তিলের খাজা স্থান করে নিয়েছে। জনপ্রিয়তার দিক দিয়েও দারুণভাবে এগিয়ে স্বল্পমূল্যের এ স্থানীয় খাবারটি। একটা সময় কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল কয়েকশ পরিবার। হাতে তৈরি, খেতে দারুণ সুস্বাদু কুষ্টিয়ার এ তিলের খাজা রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্টেশন ও লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হতে দেখা যায়। শতবছরের এ পণ্যটি এখন ক্ষুদ্রশিল্পে রূপ নিয়েছে। কুষ্টিয়ার মাটি ছাড়িয়ে এটি এখন অন্যান্য জেলায়ও তৈরি হচ্ছে। জানা যায়, ১৯০০ সালের কাছাকাছি সময়ে ‘তেলি’ সম্প্রদায়ের লোকদের মাধ্যমে এ খাবারটি প্রথম কুষ্টিয়ায় তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর ওই তেলি সম্প্রদায়কে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ওই এলাকায় কয়েকটি পরিবারকে তিলের খাজা তৈরি করতে দেখা যায়। ’৭০-এর দশকে কুষ্টিয়া শহরের চর মিলপাড়ায় কয়েকটি খাজা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই কুষ্টিয়ায় ধীরে ধীরে তিলের খাজার প্রসার ঘটতে থাকে। ক্রমেই কুষ্টিয়ার তিলের খাজার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও।

তিলের খাজা তৈরির প্রধান উপকরণ তিল ও চিনি। চুলায় চাপানো বড় লোহার কড়াইয়ের মধ্যে চিনি দিয়ে আগুনে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় ‘সিরা’। নির্দিষ্ট সময় পর নামানো হয় চুলা থেকে। হালকা ঠান্ডা হলে চিনির সিরা জমাট বেঁধে যায়। তখন শিংয়ের মতো দোডালা গাছের সঙ্গে হাতে টানা হয় জমাট বাধা চিনির সিরা। একপর্যায়ে বাদামি থেকে সাদা রঙে পরিণত হলে কারিগর বিশেষ কায়দায় হাতের ভাঁজে ভাঁজে টানতে থাকেন। তখন এর ভেতরে ফাঁপা আকৃতির সৃষ্টি হয়।

সিরা টানা শেষ হলে রাখা হয় পরিষ্কার স্থানে। নির্দিষ্ট মাপে কেটে তাতে মেশানো হয় খোসা ছাড়ানো তিল। এভাবেই তৈরি হয় তিলের খাজা। পরে এগুলো প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কারিগররা জানান, আরও এক ধরনের তিলের খাজা তারা তৈরি করেন। তাতে দুধের ছানা মেশানো হয়। এর উপকরণ ছানা, চিনি ও তিল। তবে ভালোমানের তিল পাহাড়ি অঞ্চল থেকেও সংগ্রহ করা হয়। সাধারণ তিলের খাজা ১৮০ ও স্পেশাল তিলের খাজা ৩৫০ টাকা কেজি এবং এক প্যাকেট ২০ টাকায় বিক্রি হয়।

তিলের খাজা তৈরির কারখানার মালিক সাধারণত সেখানকার শ্রমিকরাই। প্রতিটি কারখানায় মালিক-শ্রমিক মিলে ৩০-৫০ জন থাকেন। তারা যৌথভাবে বিনিয়োগ করেন। তবে এর বাইরে নিজস্ব মালিকানার কারাখানাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা সৃষ্টি করা হলে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্ত সে সুবিধা না থাকার কারণে সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রসার ঘটছে না এ ক্ষুদ্রশিল্পের। দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক অনটন আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এ শিল্প।

কারখানা মালিকের ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি আমরা জেনেছি। কিন্তু সম্ভাবনা থাকার পরও এ ক্ষুদ্রশিল্পের প্রসার ঘটছে না। আগে শতাধিক পরিবার এর সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন আমার কারখানায় কাজ করছেন মাত্র ২৬ জন শ্রমিক। সার্বিক সহায়তা পেলে এ শিল্পকে আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা বলেন, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াটা আমাদের জন্য গৌরবের। এ পণ্যের বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। ক্ষুদ্র এ শিল্পটাকে এগিয়ে নিতে স্বাস্থ্যগত মান ঠিক রাখতে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঋণের ব্যবস্থাও করা হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS