ভিডিও

বগুড়ায় ‘বাবা হুজুর’ হত্যাকান্ডের জট খুলবে আর কতদিনে?

৩৪ মাসেও খুনিরা অধরা

প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৪, ০৭:৪৫ বিকাল
আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪, ১১:০৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মাসুদুর রহমান রানা : জট খোলেনি বগুড়ার আলোচিত ‘বাবা হুজুর’ হত্যাকান্ডের রহস্যের। মামলার তদন্তের ৩৪ মাসেও কূল-কিনারা পায়নি পুলিশ। ধরা পড়েনি একজন আসামিও। মামলাটির তদন্তভার এখন পিবিআই’র হাতে।

আইপিএল অনলাইন জুয়া, পেশাগত বিষয়,জমি-জমা ও আর্থিক লেন-দেন ও নারীসহ নানা বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত চললেও দীর্ঘদিনেও হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি। হত্যাকান্ডে ‘ভাড়াটে’ খুনিদের ব্যবহার করা হয়েছে বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করলেও তাদের শনাক্ত করা যায়নি। নিহত মোজাফ্ফর হোসেনের ছোট ভাই মামলার বাদি সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৩৪ মাসেও এ হত্যার রহস্য উন্মোচিত না হওয়া ও খুনিরা ধরা না পড়ায় তার পরিবার হতাশ। তার ধারণা, তার ভাইয়ের সাথে জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে। এর আগে জমি-জমা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মোজাফ্ফরের ভগ্নিপতি হাবিবর রহমানকে খুন করা হয়। পরে সেই খুনের মামলার ৩ নম্বর স্বাক্ষী ছিলেন তার ভাই নিহত মোজাফ্ফর হোসেন। এখন হাবিবর হত্যা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সাক্ষীদের জেরাও চলছে। মোজাফ্ফর হোসেন ছিলেন সেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। কিন্তু  আদালতে সাক্ষী দেয়ার ২ মাস আগেই পরিকল্পিতভাবে পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে তার ভাইকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন ভাড়াটিয়া খুনিদের ব্যবহার করে তার ভাই মোজাফ্ফরকে হত্যা করা হতে পারে।

উল্লেখ্য,২০১৪ সালে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হেদায়া ক্বওমী মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন হাফেজ মোজাফ্ফর রহমান। ওই মাদ্রাসার একটি কক্ষে বসেই তিনি তাবিজ, কবচ, ঝাড়-ফুঁক দিয়ে কবিরাজী চিকিৎসা করতেন। ভক্তরা মোজাফ্ফর হোসেনকে ‘বাবা হুজুর’ নামে ডাকতেন। তিনি নারীর ভেঙ্গে যাওয়া সংসার জোড়া লাগানো, বন্ধ্যা নারীর বাচ্চা হওয়াসহ নানা বিষয়ে কবিরাজি করতেন। আইপিএল ক্রিকেটের অনলাইন জুয়ারুরাও তার কাছে আসতো। খেলায় বাজি ধরে খেলার রেজাল্ট জানতেও আসতো তারা।

এ অবস্থায় গত ২০২১ সালের ৪ মে সকাল পৌনে ১০ টার দিকে শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বগুড়া-নাটোর সড়কে শাজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম এলাকায় কৃষি কলেজের কাছে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সার গতিরোধ করে সামনে থেকে গুলি করে হাফেজ মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে ‘বাবা হুজুর’কে হত্যা করা হয়। মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে ‘বাবা হুজুর’ (৫৬) নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ নওদাপাড়ার গ্রামের মৃত সাইদুল আলমের ছেলে। তবে তিনি বগুড়া শহরের নিশিন্দারা কারবালা এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। এই মাদ্রাসায় আসার উদ্দেশ্যে গত ৪ মে তিনি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় চেপে বগুড়া শহরে আসছিলেন। তাকে বহনকারি অটোরিকশাটি বীরগ্রাম এলাকার কৃষি কলেজের সামনে পৌঁছুলে মোটর সাইকেযোগে দুই-তিনজন দুর্বৃত্ত এসে পথরোধ করে। এ সময় তারা কোন কথা না বলেই মোজাফ্ফর হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। প্রথম গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। পরে ফের একাধিক গুলি করা হয় মোজ্জাফ্ফরকে লক্ষ্য করে। এ সময় একাধিক গুলি মোজ্জাফরের শরীরে লাগে। তাকে লক্ষ্য করে পর পর গুলি করা হয়। গুলি করে মোটরসাইকেলে চেপে পালিয়ে যায় দৃর্বৃত্তরা। ঘটনার পর পরই ওই সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পথিমধ্যে মোজাফ্ফর হোসেন মারা যান।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী গ্রামের বাড়ি নাটোরের সিংড়ায় সুকাশ গ্রামে বসবাস করেন। ২য় স্ত্রীকে নিয়ে তিনি প্রায় ১৮ বছর আগে থেকে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন।

মামলার বর্তমান তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই বগুড়ার এসআই মো: জাকিারিয়া  বলেন, মাত্র কয়েকমাস হলে তিনি মামলাটি তদন্ত করছেন। এর আগে থানা, ডিবি ও সর্বশেষ মামলাটি তদন্ত করেছে। গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দেয়া দেয়া হয়।  পিবিআই  বগুড়া ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। এরপর তাকে মামলাটি তদন্ত করতে দেয়া হয়েছে। তিনি এ হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS