ভিডিও

পানি প্রবাহ না থাকায় মরাখালে পরিণত পঞ্চগড়ের নদ-নদী

নদী তো নয় যেন আবাদি জমি

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ১০:০৯ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২৪, ১০:০৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড় : পঞ্চগড় জেলার আয়তন মাত্র ১ হাজার ৪০৪ দশমিক ৬৩ বর্গকিলোমিটার হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে এবং স্থানীয় উৎস থেকে জেলার ওপর দিয়ে ২৭টি নদী বহমান।

তবে কিছুদিন আগে নদী গবেষক হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রিভারাইন পিপল এর পরিচালক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ রংপুর বিভাগের ২৬৮টি নদীর তালিকা রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের হাতে তুলে দেন।

সেখানে বলা হয়েছে পঞ্চগড় জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৪৬ নদী বহমান রয়েছে। তবে সংখ্যাগত তথ্যের কমবেশি থাকলেও জেলার ওপর দিয়ে বহমান সকল নদীর একই দশা। শুধু বর্ষার রূপ দেখে মনে হয় এগুলো নদী। বর্ষা শেষে সব নদীর পরিণতি একই। শীতের শুরুতেই অধিকাংশ নদীই হয়ে যায় পানিশুন্য। আর যে কয়েকটি নদীতে পানি থাকে সেগুলোর পানি প্রবাহ থাকে মরা খালের মত।

জেলার প্রধানতম নদী করতোয়া। এক সময় এই নদী দিয়েই পঞ্চগড়ে ব্যবসা পরিচালনা করত ব্যবসায়ীরা। এই নদীকে নিয়েই ঘুরপাক খেত পঞ্চগড়ের অর্থনীতি। কিন্তু কালের বিবর্তনে করতোয়ার এখন মরণ দশা। শুধু বর্ষাকালে দেখলে মনে হয় এটি করতোয়া নদী। আর শীত শুরুর আগেই প্রমত্তা করতোয়া হয়ে পড়ে শীর্ণকায় মরা খালে।

এখন বাইরে থেকে আসা লোকজন সেতুর নিচে তাকালে দেখতে পাবে শুধুই সবুজের সমারোহ। সবুজের মাঝ বরাবর ড্রেনের পানির মত বয়ে চলেছে করতোয়া নদী। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা ধান লাগিয়েছে যত্রতত্র। শুধু করতোয়াই নয়, পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদীই এখন শীর্ণকায় মরা খাল। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দুই তীর শুধুই ধু-ধু বালুচর।

জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে করতোয়া, চাওয়াই, তালমা, পাঙ্গা, কুড়ুম, পাম, মহানন্দা, ভেরসা, ডাহুক, তীরনই, রণচন্ডি, বেরং, জোড়াপানি, সাও, ঘোড়ামারা, পাথরাজ, নাগর, সিঙ্গিয়া, বহু, রসেয়া, ঘাগরা, মরাতিস্তাসহ উজান থেকে নেমে আসা নদীরই এই দৈন্য দশা। প্রতিবেশী ভারত থেকে বয়ে আসা নদীর উৎসমুখে বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণ করায় বর্ষার পরই এসকল নদী পরিণত হয় মরা খালে।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদী শাসন আইন অমান্য করে নদীগুলোর উৎস এবং প্রবেশ মুখে বাঁধ, স্লুইস গেইট, জলাধার, ফিডার ক্যানেল ও রেগুলেটর নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন এবং জেলার ২২১ কিলোমিটার সীমান্তব্যাপী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে নদীগুলো ধীরে ধীরে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এদিকে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

এরই মধ্যে দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এ সকল নদীর মধ্যে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি নদী ও একটি খাল পুন: খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুন:খনন’ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীর ৭৮ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়ার ভেরসা নদীর ১০ কিলোমিটার, সদরের চাওয়াই নদীর ২০ কিলোমিটার, বোদার পাথরাজ নদীর ৩০ কিলোমিটার এবং দেবীগঞ্জের বুড়ি তিস্তা নদীর ২০ কিলোমিটার এবং আটোয়ারীর বড় সিংগীয়া খালের ৬ কিলোমিটার খনন করা হয়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে এসকল নদী ও খান পুন:খননে কোন উন্নতি হয়নি। পুন: খননের পরই বর্ষায় দু’পাড় ভেঙে আবারও আগের অবস্থানে ফিরে গেছে এসব নদী।

এ ব্যাপারে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, নদ-নদীগুলোর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাবে।

এতে এলাকায় মরুকরণসহ কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এছাড়া জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। পরিকল্পিতভাবে এসব নদী পুন:খনন করা হলে নদী তার পুরনো যৌবন ফিরে পাবে। আর নদীর সুফল পাবে পঞ্চগড়ের মানুষ।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS