ভিডিও

সোমালিয়া জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিক নাজমুল ও জয়ের পরিবারে ঈদের আমেজ

প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৪, ০৯:৩৬ রাত
আপডেট: মে ১৬, ২০২৪, ১২:৫৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

করতোয়া ডেস্ক : সোমালিয়া জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ২৩ নাবিক দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের নাবিক নাজমুল ও নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ আজ বুধবার (১৫ মে) নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসায় তাদের পরিবারে শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ। সন্তানকে ফিরে পেয়ে যেমন আনন্দ তেমনি স্বজনরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন তাদের এক নজর দেখার জন্য।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি জানান, ভেবেছিলাম মা-বাবাসহ আত্মীয় স্বজনদের সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না। তখন নামাজ পড়তাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও। এভাবেই জিম্মি হয়ে মৃত্যুর দুয়ারে বসে কেটেছে তার ৩৩ দিন।

মুক্তির পর নিজ বাড়িতে ফিরে কথাগুলো বলছিলেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নাজমুল হক হানিফ। তিনি উপজেলার চরনূরনগর গ্রামের আবু শামার পুত্র। আজ বুধবার (১৫ মে) সকালে ৬৭ দিন পর বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে জিম্মি দশার নানা দুঃসহ স্নৃতি তুলে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এসময় তাকে দেখতে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

নাবিক নাজমুলের বাবা আবু শামা বলেন, সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ছেলেকে বুকে নিয়ে মা নার্গিস খাতুন বলেন, দিন-রাত ছেলের ছবি এবং মোবাইল ফোনে কোনো সংবাদ এলো কিনা এই চিন্তায় বসে থেকেছি। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চাইছিল না।

নাজমুল অপহৃতের পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তার-বাবা। আজ ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। ঈদের দিন কিভাবে কেটেছে বলতে পারবো না। ছেলে বাড়িতে ফিরে আসায় আমি ঈদের সকল কিছু রান্না করছি। ছেলেকে নিয়ে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছি।

মা-বাবার পাশে দাঁড়ানো নাজমুল হক বলেন, জিম্মিকালে প্রতিটি মুহুর্ত কেটেছে মৃত্যু আতঙ্কে। বন্দুক হাতে টহল দিত জলদস্যুরা। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। এখন এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা নেই্ আমার। শুধু বলতে চাই, মা-বাবাকে কাছে পাব, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে। এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।

প্রসঙ্গ, গত ১২ মার্চ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক। এদের মধ্যে বন্দি জাহাজের ক্রু হিসেবে ছিলেন সিরাজগঞ্জের নাজমুল হক।

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরেছেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ্র নাবিক নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ। অনিশ্চিত অবস্থা কাটিয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে আসায় পরিবারে বইছে ঈদের আমেজ। তাকে এক নজর দেখতে আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষজন ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

গতকাল মঙ্গলবার দেশে পৌঁছে চট্টগ্রাম বন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ বুধবার (১৫ মে)  সকালে তিনি তার নিজ বাড়িতে ফেরেন। জয় মাহমুদ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমান ও আরিফা বেগম দম্পতির ছেলে।

জয়ের মা আরিফা বেগম (৫০) বলেন, ‘আল্লাহ আমার বুকের মানিককে ফেরত দিয়েছেন। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার এ আনন্দ প্রকাশ করা সম্ভব না।’ ঈদের আগে জলদস্যুদের হাতে আটক হওয়ার খবরে তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে যায়।

তবে দীর্ঘদিন পর ছেলে ফিরে আসায় পরিবারে আজকে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে। জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিক সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরায় জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান (৫৬) বলেন, ‘দীর্ঘ দুই মাস পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমরা খুশি। সারাদেশের মানুষের দোয়ায় আজ সুস্থ অবস্থায় আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিক বাড়ি ফিরতে পেরেছে। নাবিক জয় মাহমুদ বলেন, এমভি আব্দুল্লাতে ৩৩ দিন জিম্মি অবস্থায় ছিলাম। গতকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরে গতকাল সকালে বাসায় পৌঁছেছি। এ আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না।

জিম্মিদশার দূর্বিষহ দিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আটকের প্রথম দিকের দিনগুলি বেশি কষ্টের ছিল। আটক হওয়ার পর সবাই কান্নাকাটি করছিলাম। কীভাবে কি হবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তবে যতই দিন যাচ্ছিল জলদস্যুদের ব্যবহার ততই শান্ত হচ্ছিলো।

জাহাজ কর্র্তপক্ষের দূরদর্শিতায় ৩৩ দিন আটক থাকার পর আল্লাহর রহমতে বাড়িতে ফিরতে পেরেছি। আটক অবস্থায় ঈদের নামাজ পড়লেও আনন্দ ছিল না। আজকে বাসায় ফিরে ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দ হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয় বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। আটক জাহাজের ২৩ নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে জাহাজের সাধারণ নাবিক (ওএস) হিসেবে কর্মরত ছিলেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার জয় মাহমুদ।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS