ভিডিও

তাঁতপল্লির সর্বশষ তাঁত দু’টিও বন্ধ হওয়ার পথে

প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৪, ১০:৪০ রাত
আপডেট: মে ১৫, ২০২৪, ১০:৪০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আবুল কালাম আজাদ, বেড়া (পাবনা) : তাঁত সমৃদ্ধ গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল পাবনার বেড়া পৌর এলাকার হাতিগাড়া মহল্লা। তাঁতের সম্মিলিত খটর-খট শব্দে মুখরিত হয়ে থাকতো গোটা মহল্লা। এখন সেখানে সুনসান নীরবতা। অথচ এক যুগ আগেও এই মহল্লায় চালু ছিল প্রায় দেড় হাজার তাঁত। বর্তমানে এই মহল্লার দু’টি বাদে বাকি সব তাঁতই বন্ধ হয়ে গেছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যে তাঁত দু’টি কোন রকমে চলছে তার মালিক মাসুদ আলী (৪০)।

মহল্লার যে তাঁতগুলো ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর তাঁতিদের অনেকেই বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। কেউ কেউ অবশ্য আশায় ছিলেন গত ঈদুল ফিতরের মধ্যে বন্ধ তাঁতগুলো চালু করার। কিন্তু সুতা, রং ও অন্যান্য তাঁত সামগ্রীর দামের সাথে উৎপাদিত কাপড়ের বাজারমূল্যের ব্যাপক ব্যবধান থাকায় শেষ পর্যন্ত তাঁতগুলো আর চালু করা যায়নি।

সামনের ঈদুল আযহা উপলক্ষেও বাজারে কাপড়ের চাহিদা ও দাম বাড়েনি। বরং ঈদুল ফিতরের বাজারের চেয়ে প্রতি থান (চারটি) লুঙ্গির দাম ৫০ থেকে ১শ’ টাকা কমেছে। তাই আপাতত কোনো তাঁতই আর চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে তাঁত শিল্পের চরম দুরবস্থার এই চিত্র শুধু হাতিগাড়া মহল্লাতেই নয়, পাবনার বেড়া উপজেলার অন্যান্য তাঁত সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে দেখা গেছে। দুই ঈদকে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) সামনে রেখে যেখানে বন্ধ তাঁতগুলোও চালু হয়ে যায়, সেখানে লোকসানের ভয়ে এবার উল্টো তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

হাতিগাড়া মহল্লার মতোই বিভিন্ন তাঁত সমৃদ্ধ গ্রাম থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তাঁত শিল্প। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি তাঁত সমৃদ্ধ গ্রাম ঘুরে জানা যায়, এক সময় বেড়া উপজেলায় ৮ হাজারেরও বেশি তাঁত চলত। কিন্তু নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এখন তা প্রায় ৪ হাজারে নেমে এসেছে। সমস্যা পিছু না ছাড়ায় এসব তাঁতও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

এরই মধ্যে উপজেলার হাতিগাড়া, জগন্নাথপুর, পেঁচাকোলা, মালদাপাড়া, রাকশাসহ বিভিন্ন গ্রামের শত শত তাঁতি লোকসানে পড়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে এলাকা ছেড়েছেন। তাদের কেউ কেউ ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন নয়তো দিনমজুরের কাজ করছেন। অনেকে আবার এখনও কর্মহীন হয়ে রয়েছেন।

আজ বুধবার (১৫ মে) বেড়া উপজেলার তাঁত সমৃদ্ধ হাতিগাড়া, জগন্নাথপুর, পেঁচাকোলা, রাকশা গ্রাম ঘুরে সুনসান পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। অথচ এক সময় ঈদুল আযহার মাস খানেক আগে এসব গ্রামে ঢুকতেই তাঁত বোনার শব্দে কানে তালা লাগার অবস্থা হত।

বেড়ার নতুনভারেঙ্গা ইউনিয়ন প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি মো. আলম বলেন, ‘আমাগরে এই ইউনিয়নের ৭৫ ভাগ তাঁত বন্ধ হয়া গেছে। বন্ধ হওয়া তাঁতের তাঁতিরা ঋণের ভয়ে এলাকা ছাড়া হয়া আছে। আমার নিজেরই চারটা তাঁতের সবগুলোই বন্ধ রাখিছি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS