ভিডিও

সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে কৃষক ৩ হাজার কোটি টাকার ফসল ঘরে তুললো

প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৪, ০৮:২০ রাত
আপডেট: মে ১৯, ২০২৪, ০৮:২০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সাহাদত জামান, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়া সারিয়াকান্দির বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ফসল কৃষকের ঘরে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস। শুধুমাত্র মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, পিঁয়াজ এবং পাট থেকেই আসে ২৩৩৫ কোটি টাকা।

বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ এবং ৬ টি ইউনিয়নের আংশিক যমুনা নদীগর্ভে অবস্থিত। তাই এ উপজেলার বিশালাকার আয়তনের চরাভূমি রয়েছে। এসব চরাঞ্চলগুলো একসময় পতিত থাকতো।

বর্তমানে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করে এসব পতিত চরাভূমিতে পানি সেচ দিয়ে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছেন। প্রতিবছর উজান থেকে বন্যার পানিতে বয়ে আসা বেলে দোআঁশ মাটিতে বেশ কিছু ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই এ উপজেলার চরাঞ্চলে দেশি উফশি জাতের মরিচের চাষ হয়।

দেশি উফশি জাতের মরিচের চেয়ে হাইব্রিড জাতের মরিচের লাভ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় কৃষকরা এখন হাইব্রিড মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন এবং এ জাতের ফসল তারা ঘরে তুলেছেন। গত কয়েক বছর ধরেই কৃষকেরা চরাঞ্চলের পতিত জমিতে ব্যাপক হারে ভুট্টার আবাদ করেছেন। যা এখন তাদের ঘরে উঠেছে।

এদিকে গত ২ বছর ধরে এ উপজেলায় হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকেরা বাজিমাৎ করেছেন। যা চরাঞ্চলের পতিত জমিতে চাষ হয়েছে। তাছাড়া আদিকাল থেকেই এ উপজেলায় গ্রীষ্ম মৌসুমে বিশালাকার আয়তনের জমিতে পাট চাষ হয়। এ ফসলগুলো ছাড়াও নানা ধরনের ফসল এখন চরাঞ্চলে চাষ হচ্ছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় ৩৩১০ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ২৬৮ টন মরিচ উৎপন্ন হয়েছে, যার মূল্য ২৭৮ কোটি টাকার বেশি। লক্ষ্যমাত্রার  বেশি ৮২৫০ হেক্টর জমিতে ৮৫ হাজার ২০০ টন ভুট্টা উৎপন্ন হয়েছে, যার মূল্য ২৫৫ কোটি টাকার বেশি।

গত বছর উপজেলায়  ৫৮০০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৫০০ টন পাট উৎপন্ন হয়েছে, যার মূল্য ৯৪২ কোটি টাকার বেশি। এ বছর এ উপজেলায় ১৫৮০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৯৬০ টন পিঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে, যার মূল্য ৭৫৮ কোটি টাকার বেশি। উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে ২২০০ টন মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হয়েছে এবং যার মূল্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

এছাড়া ১৬৫০ হেক্টও জমিতে কাউন, ১১০ হেক্টর জমিতে চিনা (খেরাছি), ৮১০ হেক্টর জমিতে ১২১৫ টন চিনাবাদাম, ১৪৪১০ হেক্টর জমিতে ধান, ৭১০ হেক্টর জমিতে গম, ৫৪০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই, ৯১৫ হেক্টর জমিতে মসুর ডাল উৎপন্ন হয়েছে।

তাছাড়া মিষ্টি আলু, সরিষা, রসুন, খেসারি, ছোলা, মটর, অড়হর, মুগ, তিল, তিসি, সয়াবিন, সূর্যমুখী, আখ, তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁপে, কলা প্রভূতি জাতের ফসল চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমানে চাষ হয়েছে। এসব ফসলের প্রায় শতকরা ৭০ শতাংশই চরাঞ্চলে উৎপন্ন হয়।

উপজেলার কর্ণীবাড়ী ইউনিয়নের ইন্দুরমারা চরের শিপন মিয়া জানান, বন্যার মধ্যে তারা খুব কষ্টে থাকলেও বন্যা পরবর্তী নানা ধরনের ফসলে এখন তাদের বাড়ি ভরে গেছে। এসব ফসল বিক্রি করে তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আগে চরের মানুষরা না খেয়ে থাকলেও এখন আর কাউকেই না খেয়ে থাকতে হয় না। অনেকেই চরের ভেতরেই এখন পাকা বাড়িঘর করছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ি আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করে এবং সঠিক মাত্রায় সার পানি প্রয়োগ করে কৃষক নানা ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষ করে ভাল ফলন ঘরে তুলছেন।

চরাঞ্চল এখন আর এ উপজেলার অভিশাপ না, এ অঞ্চল এখন এ উপজেলার আশির্বাদ। চরাঞ্চলের মানুষরা বন্যার কয়েকমাস কষ্টে থাকলেও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে নানা ধরনের ফসল চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS